এমডি নিয়োগের শর্ত সংশোধন ও চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন

  • সংশোধিত প্রবিধানমালা করার ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং হয়নি।

  • সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং ছাড়া এমন প্রবিধানমালা করার সুযোগ নেই।

পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চুক্তির মেয়াদ ছিল ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর দুই মাস আগে সংস্থাটির বোর্ড অব গভর্নরসের এক সভায় এমডি নিয়োগের বিদ্যমান প্রবিধানমালা সংশোধন এবং এমডির মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখনো এমডির দায়িত্বে আছেন মুহম্মদ মউদুদউর রশীদ সফদার। তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়া যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পিডিবিএফের সাবেক ও বর্তমান একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বোর্ডের ওই সভায় সব প্রক্রিয়াই হয় বর্তমান এমডির চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে। সেখানে ২৩ বছরের পুরোনো প্রবিধানমালাকে কার্যকর দেখানো হয়। আবার প্রবিধান সংশোধনের আগেই এমডিকে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর চিঠি দেওয়া হয়।

সংস্থাটির বোর্ড অব গভর্নরসের একই সভায় এমডি নিয়োগের বিদ্যমান প্রবিধানমালা সংশোধন এবং এমডির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

পিডিবিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহম্মদ মউদুদউর রশীদ সফদারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত ২০ ডিসেম্বর। ১৭ অক্টোবর পিডিবিএফের বোর্ড অব গভর্নরসের ৯৪তম সভায় বিদ্যমান প্রবিধানমালা অকার্যকর উল্লেখ করে ২৩ বছর আগে সংস্থার বোর্ডের অনুমোদিত প্রবিধানমালার আলোকে এমডির চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এরপর চুক্তির মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে ৩০ অক্টোবর এমডিকে চিঠি দেওয়া হয়। এর দেড় মাসের বেশি সময় পরে ২০ ডিসেম্বর সংশোধিত পিডিবিএফের এমডি চাকরি প্রবিধানমালার গেজেট হয়। যদিও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রবিধানমালা জারির ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের চূড়ান্ত ভেটিং (আইনি যাচাই) নিতে হয়, পিডিবিএফের সংশোধিত প্রবিধানমালার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

পিডিবিএফের নথি ও সভার কার্যপত্র থেকে দেখা যায়, সভায় জানানো হয়, ২০১৮ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে ২০০০ সালের ২৩ মে জারি করা পিডিবিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ প্রবিধানমালাকে সমুন্নত করা হয়। আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায়কে বহাল রেখে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর রায় দেন। এর ফলে ২০২০ সালের প্রবিধানমালা অকার্যকর হয়ে যায়।

২০০০ সালের প্রবিধানমালায় বলা ছিল, অন্যান্য শর্তপূরণ সাপেক্ষে বোর্ড সম্পাদিত চুক্তির মেয়াদ যেকোনো সময়কাল পর্যন্ত বর্ধিত করতে পারবে। আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ২০২০ সালের প্রবিধানমালা সংশোধন করা প্রয়োজন বলে বোর্ড অব গভর্নরসের সভায় জানানো হয়। চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির এই সংশোধনী যুক্ত করে ‘পিডিবিএফের এমডি চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২৩’ প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত হয় সভায়।

২৩ বছর আগের ওই প্রবিধানমালার আলোকেই বর্তমান এমডির মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। চুক্তির ধারাবাহিকতায় ২০২৬ সালের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এমডির মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে সংস্থাটির সাবেক এমডি আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আদালত রায় দেওয়ার পরের তিন বছর প্রবিধানমালা সংশোধনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিদ্যমান প্রবিধানে এমডির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ ছিল না। তাই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তড়িঘড়ি করে একই সভায় প্রবিধানমালা সংশোধন ও এমডির চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে পিডিবিএফের এমডি মউদুদউর রশীদ সফদারের মুঠোফোনে ৩ ফেব্রুয়ারি ফোন করা হয়। প্রসঙ্গ শুনেই তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে সংযোগ কেটে দেন। পরে পিডিবিএফের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া এমডির মেইলে প্রশ্ন পাঠিয়ে জবাব পাওয়া যায়নি।

আইন মন্ত্রণালয়ের যাচাই হয়নি

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে, স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রবিধানমালায় কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন হলে সংশোধনের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির বিবেচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবে। কমিটি প্রস্তাবিত সংশোধনের বিষয়ে সম্মতি দিলে এর ওপর লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ করতে হবে। এরপর প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ সংশোধিত প্রবিধানমালা জারি করতে পারবে।

পল্লী উন্নয়ন বিভাগ গত ২০ ডিসেম্বর পিডিবিএফের এমডি নিয়োগের সংশোধিত প্রবিধানমালার গেজেট প্রকাশ করে। এই সংশোধিত প্রবিধানমালা করার ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং হয়নি। সংশোধনের আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়নি।

গেজেট অনুমোদন করেন পিডিবিএফের বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারপারসন এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সিনিয়র সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম। এ বিষয়ে কথা বলতে ৪ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে তাঁর দপ্তরে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এরপর কয়েক দিন মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। হোয়াটাসঅ্যাপে প্রশ্ন পাঠিয়েও তাঁর জবাব পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখার একজন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পিডিবিএফের এমডি নিয়োগসংক্রান্ত প্রবিধানমালা আইন মন্ত্রণালয়ে আসেনি। তাঁকে পিডিবিএফের সংশোধিত প্রবিধানমালা দেখানো হলে তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং ছাড়া এমন প্রবিধানমালা করার সুযোগ নেই।