তিন পার্বত্য জেলায় নেই নির্বাচনী উত্তাপ, প্রচারণায় কেবল আওয়ামী লীগ

রাঙামাটিতে নির্বাচনী প্রচারনার উত্তাপ নেই। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রচারণা কেন্দ্রেও লোকজন নেই। রাঙামাটি শহরের ভেদাভেদী বিদ্যুৎ অফিস প্রাঙন থেকে গতকাল দুপুরে তোলা। সুপ্রিয় চাকমা।

বিএনপি অংশ নিচ্ছে না, প্রার্থী নেই আঞ্চলিক দলের, তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে জমে ওঠেনি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। প্রতীক বরাদ্দের পর গত সোমবার থেকে প্রচারণা শুরু হলেও এখনো আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি প্রার্থী ও তাঁদের অনুসারীদের তৎপরতা চোখে পড়েনি। তিন জেলায় সাঁটানো ব্যানার-পোস্টারের প্রায় সবই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বাইরে তিন জেলায় শক্ত অবস্থান রয়েছে বিএনপি এবং আঞ্চলিক দলগুলোর। এসব দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন ভোটাররা। ভোটারদের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কম থাকায় তাঁদের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াও কঠিন হবে বলেও অভিমত অনেক ভোটারের।

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবান সংসদীয় আসনে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছয়বারের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের সঙ্গে লাঙ্গল নিয়ে লড়বেন জাতীয় পার্টির এ টি এম শহিদুল ইসলাম। আসনটিতে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৮২ টি।

খাগড়াছড়িতে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে। এর বাইরে জাতীয় পার্টির মিথিলা রোয়াজা, তৃণমূল বিএনপির উশ্যেপ্রু মারমা ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মোস্তফা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আসনটিতে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৫ হাজার ৩৪৬ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৯৬ টি।

রাঙামাটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। তাঁরা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপঙ্কর তালুকদার, তৃণমূল বিএনপির হাফেজ মো. মিজানুর রহমান এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের অমর কুমার দে। রাঙামাটিতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬১ এবং ভোটকেন্দ্র ২১৩ টি।

বান্দরবান আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর বাহাদুর উশৈসিং থানচি থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। গতকাল মঙ্গলবার তাঁর পক্ষে জেলা শহর, রুমা ও লামা উপজেলা সদরে প্রচারণা, মিছিল ও মাইকিং করা হয়েছে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টির এ টি এম শহিদুল ইসলামের তৎপরতা চোখে পড়ে কেবল বান্দরবান বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের কাছে দোয়া চাওয়ার মধ্যে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মীপদ দাশ বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থীকে ছোট-বড় ভাবার সুযোগ নেই। তাই প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে সংগঠিত হয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ টি এম শহিদুল ইসলাম বলেন, তাঁর পোস্টার এখনো প্রস্তুত না হওয়ায় লাগানো সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার থেকে তিনি পুরোদমে প্রচার শুরু করবেন।

জেলায় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ভিত কেমন জানতে চাইলে দলটির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শওকত জামান বলেন, ১৯৯৬ সালের পর জাতীয় পার্টি বান্দরবানে কোনো সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ১ হাজার ৫৯৯ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন। তখন বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩৯ হাজার ৪৮৮ ভোট।

বান্দরবান আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবার ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে না পারলে দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার পরও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। এ জন্য ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার জন্যও প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

রাঙামাটি জেলায় নির্বাচনী ক্যাম্প উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করেন নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার। গতকাল নির্বাচনের প্রচারণার জন্য বাঘাইছড়ি সফর করেন। জেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বাইরে কয়েকটি স্থানে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের প্রার্থী অমর কুমার দের ব্যানার চোখে পড়ে।

স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনে না এলেও আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতির নেতা এবং সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার প্রার্থী হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আশা করেছিলেন ভোটাররা। ঊষাতন ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপঙ্কর তালুকদারকে হারিয়েছিলেন। তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় জেলায় নির্বাচন আবারও নিরুত্তাপ হয়ে পড়েছে।

রাঙামাটি জেলা শহরের ব্যবসায়ী সুখময় চাকমা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না এলেও জনসংহতি সমিতির প্রার্থী থাকলে নির্বাচন কিছুটা জমত। এখন মানুষ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাবেন কি না, সন্দেহ রয়েছে।’

খাগড়াছড়িতে চারজন প্রার্থী থাকলেও প্রচারণা শুরু করেছেন কেবল বর্তমান সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। জেলার মহালছড়ি উপজেলায় জনসভার মধ্য দিয়ে তিনি প্রচারণা শুরু করেন।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হলেও নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস তেমন চোখে পড়েনি। জেলা শহরের শালবন এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, ‘এবারে নির্বাচন অসম প্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড়দের খেলার মতো মনে হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দল সমানে-সমান না হলে দর্শকদের খেলা দেখার আগ্রহ থাকে না।’