ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৪ নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবি

ছাত্রলীগের দুই নেতার করা মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৪ নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিতে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন করেছেন
ছবি: সাজিদ হোসেন

ছাত্রলীগের দুই নেতার করা মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৪ নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবি করেছেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। একই সঙ্গে তাঁদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হামলাকে ‘মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে ওই ঘটনার বিচার দাবি করেছেন নেতা-কর্মীরা।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি করা হয়। আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ এবং গ্রেপ্তার ছাত্রদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মূলত ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন।

গত শুক্রবার বিকেলে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। সেখানে হামলা করে তাঁদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ। হামলায় পরিষদের অন্তত ১৫ নেতা-কর্মী আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে গিয়েও তাঁদের পেটায় ছাত্রলীগ। বিকেলে মেডিকেল থেকে পরিষদের নেতা-কর্মীদেরই হাসপাতাল থেকে আটক করে শাহবাগ থানার পুলিশ।

ছাত্রলীগ নেতা নাজিম উদ্দিন ও আমিনুর রহমান ৭ অক্টোবর রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৫ নেতা-কর্মী ও অজ্ঞাতনামা ১৪০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করেন। দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন সকালে ছাত্র অধিকারের ২৪ নেতা-কর্মীকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠায় শাহবাগ থানার পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলাম পরিষদের নেতা-কর্মীদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত মঙ্গলবার তাঁদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।

ছাত্র অধিকারের গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, ‘৭ অক্টোবরের ঘটনায় মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে হামলার মাধ্যমে চিকিৎসা পাওয়ার মৌলিক অধিকারও খর্ব করা হয়েছে। গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের অনেকেই অসুস্থ ও আহত। তাঁদের কারও হাত ভেঙেছে, কারও পা ভেঙেছে, কারও আবার মাথা ফেটেছে। অনেকের একাডেমিক পরীক্ষা রয়েছে। তা সত্ত্বেও তাঁদের জামিন না হওয়া দেশের বিচারব্যবস্থার জন্য একটি বাজে দৃষ্টান্ত। আমরা অবিলম্বে তাঁদের সবার মুক্তি দাবি করছি। পাশাপাশি ৭ অক্টোবরের হামলার বিচার করতে হবে।’

পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ‘আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, দেশের বিচারব্যবস্থা সরকারের হাতে কুক্ষিগত হয়ে গেছে। তা না হলে অসুস্থ শিক্ষার্থীরা কেন জামিন পেলেন না? বিচারব্যবস্থার এই লেজুড়বৃত্তির নিন্দা জানাই। গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও তাঁদের ওপর হামলার বিচার চাই।’

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা জাবির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আজ দেশের মানুষ কথা বলতে পারছে না, ন্যূনতম গণতান্ত্রিক দাবিতে সভা-সমাবেশ করতে গেলে হামলা হচ্ছে। এটি আমাদের সামনে সারা দেশের বীভৎস অবস্থাকেই তুলে ধরে। পুলিশি রাজত্বের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা শাকিল মিয়া ও আহনাফ সাঈদ খান, আইন বিভাগের ছাত্র মোল্লা ফারুক এহসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।