গাইবান্ধার নারীনেত্রীরা ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির সুবিধা কম পান

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) রাজধানীর একটি হোটেলে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করে
ছবি: সংগৃহীত

ব্যক্তিগতভাবে প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের সুযোগ থেকে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে গাইবান্ধা জেলার দুটি উপজেলার নারীনেত্রীরা। এ ছাড়া অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নিরাপত্তার বিষয়েও তাঁদের ধারণা অনেক কম।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলায় এই জরিপ পরিচালনা করে। ন্যাশনাল এন্ডোমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির সহায়তায় এই প্রকল্পে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, ডিজিটাল সাক্ষরতা, সুরক্ষা, ভুয়া তথ্য যাচাইয়ের সক্ষমতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় প্রযুক্তির ভূমিকা: অংশীজনদের ভাবনা’ শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। বিইআইয়ের উপপরিচালক আশীষ বণিক প্রকল্পের বিস্তারিত ফলাফল তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলায় ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ৪০০ জনের ওপর জরিপ চালানো হয়। তরুণ, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, রাজনৈতিক নেতা, নারীনেত্রী এবং সাংবাদিকেরা এতে অংশ নেন।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়, ব্যক্তিগতভাবে স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ সুবিধা আছে ১০ শতাংশ নারীনেত্রীর। সবচেয়ে বেশি ৭৫ শতাংশ আছে সাংবাদিকদের। এই নারীনেত্রীদের মাত্র ৮ শতাংশ নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এখানেও এগিয়ে আছেন সাংবাদিকেরা।

অনলাইন হয়রানি সম্পর্কে সবচেয়ে কম জানেন রাজনৈতিক নেতা ও নারীনেত্রীরা। তবে প্রশিক্ষণের পর তাঁদের এ-সম্পর্কিত ধারণা বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিইআই। এ ছাড়া ভুয়া তথ্য ও সংবাদ বাছাইয়ের সক্ষমতা সবচেয়ে কম ছিল নারীনেত্রীদের। প্রশিক্ষণের পর সেটা বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বলা হয়, ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা সম্পর্কে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কোনো ধারণা নেই।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন প্রকার ঝুঁকি ও প্রতারণা থেকে নিরাপদ থাকার সক্ষমতা সবচেয়ে কম ছিল ১৪ শতাংশ রাজনৈতিক নেতাদের। অনলাইনে মতপ্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষক ও নারীনেত্রী। প্রশিক্ষণের পর তাঁদের এই হার ১৫ শতাংশের নিচে নামে। কারণ হিসেবে বলা হয়, সদ্য বিলুপ্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কী আছে, সেটা সম্পর্কে তাঁরা জানেন না।

বিইআই জানিয়েছে, ডিজিটাল সাক্ষরতা সম্পর্কে সবচেয়ে কম ধারণা শিক্ষকদের, ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। এরপর আছে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা। তবে বিইআই দাবি করেছে, প্রশিক্ষণের পর সবারই এ ধারণা বেড়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, সরকার একা পারবে না, বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, দেশে ডিজিটাল মাধ্যমের বেশি ব্যবহার হয় বিনোদনমূলক কাজে। ডিজিটাল সাক্ষরতা ও প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর কথা বলেন।

সভাপতির বক্তব্যে বিইআইয়ের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহার বেশি এবং তরুণেরা তাতে আকৃষ্ট।  দেশীয় মূল্যবোধে প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বিইআইয়ের উপদেষ্টা ফারুক সোবহান, পুলিশের সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মোহসিন প্রমুখ।