আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ দলগুলোই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে

‘নির্বাচন ২০২৪ এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অধ্যাপক এ কে এম ওয়ারেসুল করিম। বুধবার রাজধানীর দৃকপাঠ ভবনেছবি: প্রথম আলো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে, সেগুলো একটি দল অর্থাৎ আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষিত বিবেচনায় রাজনৈতিক দলের অধীনে ২০২৪ সালে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়।

গতকাল বুধবার রাজধানীর দৃকপাঠ ভবনে এক অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এ কথা বলেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ও ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম ওয়ারেসুল করিম। অনুষ্ঠানে তিনি ‘নির্বাচন ২০২৪ এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। গবেষণায় নির্বাচন কমিশনের ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে গিয়ে অধ্যাপক এ কে এম ওয়ারেসুল করিম বলেন, আসন্ন নির্বাচনে একটি দলের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিচ্ছে। দেশে যে পরিস্থিতি আছে, তাতে সামনে চরম স্বৈরাচার, নৈরাজ্য, সরকারের ব্যর্থতা ও নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বিদেশিরা উদ্ধার করতে আসবে, তা তিনি মনে করেন না। কারণ হিসেবে বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ থাকলেও সরকারের ওপর প্রতিবেশীদের সমর্থন রয়েছে।

‘নির্বাচন ২০২৪ এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা। বুধবার রাজধানীর দৃকপাঠ ভবনে
ছবি: প্রথম আলো

এই অধ্যাপক মনে করেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে সব বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং নাগরিক সমাজকে জেগে উঠতে হবে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১৪৯ আসনের ১ হাজার ৪০৬ কেন্দ্রে এক ভোট বা শূন্য ভোট পেয়েছে। এ ছাড়া ২১১টি আসনের ৩ হাজার ৭৪২টি কেন্দ্রে তারা ১০ বা তার চেয়ে কম ভোট পেয়েছে। যেখানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট মাত্র ৪টি কেন্দ্রে শূন্য ভোট পেয়েছিল।

‘নির্বাচন ২০২৪ এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। বুধবার রাজধানীর দৃকপাঠ ভবনে
ছবি: প্রথম আলো

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট ১০ হাজার কেন্দ্রে ১ শতাংশের কম ভোট পেয়েছিল। যেখানে মহাজোট পায় প্রায় ৯৭ শতাংশ ভোট। এই নির্বাচনে ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ এবং ২ হাজার ২০৩টি কেন্দ্রে ৯৫ থেকে শতভাগ ভোট পড়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জালিয়াতির বহু প্রমাণ রয়েছে। ওই নির্বাচন সুপরিকল্পিত, সুনিপুণভাবে কার্যকর করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রের কিছু প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশ ছাড়া সম্ভব ছিল না। এতে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার যে ক্ষতি হয়েছে, তা মেরামতে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে।

গবেষণায় আরও বলা হয়, যারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে চুরি করেছিল, ২০২৪ সালে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য তাদের ওপর ভরসা করা যায় না। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর অতীত আচরণ প্রমাণ করে যে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। এ ছাড়া আলোচনায় অংশ নেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, কলামিস্ট জাহেদ উর রহমান, দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলমসহ মানবাধিকারকর্মী ও অধিকারকর্মীরা।