ওসমান হাদিকে হত্যার বিচার ও সংবাদমাধ্যম-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার নিন্দা সম্মিলিত নাগরিক সমাজের
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড এবং তা ঘিরে সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ। ওসমান হাদি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার, সহিংসতার অবসান এবং নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে ১৬টি সংগঠনের এই জোট।
শুক্রবার জোটের এক বিবৃতিতে পাঁচটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের স্বচ্ছ তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন, নালন্দা বিদ্যালয় ও ধানমন্ডি ৩২-এ হামলাসহ দেশজুড়ে সংঘটিত সব সন্ত্রাসী হামলার তদন্ত করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করে নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা ঢাকতে অন্যায় গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সহিংসতায় উসকানিদাতাদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১২ ডিসেম্বর জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর নৃশংস সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আপসহীন এই কর্মী গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে আমরা এই হত্যাকাণ্ডের স্বচ্ছ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অশনিসংকেত উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এমন এক সময়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটল, যখন দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সবচেয়ে জরুরি। হামলার পর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে, বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ঘটনাটিকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন ও নালন্দা বিদ্যালয় এর শিকার হয়েছে। সাংবাদিকেরা কর্মরত থাকা অবস্থায় এসব ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে ডেইলি স্টারের আটকা পড়া সংবাদকর্মীরা ছাদে আশ্রয় নেন। তাঁদের উদ্ধারে সেখানে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর গেলে তাঁর ওপরও হামলা চালানো হয়। বেরিয়ে যাওয়ার সময় নারী সাংবাদিকদের ওপর হামলারও অভিযোগ উঠেছে।
ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার এবং ভারতীয় হাইকমিশনে হামলার চেষ্টা করা হয়েছে, যা দায়িত্বজ্ঞানহীন। ইতিমধ্যে ধ্বংস হওয়া ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভবন পুনরায় ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। তা ছাড়া আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় ঢাকায় উদীচীর কার্যালয়েও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
সম্মিলিত নাগরিক সমাজের বিবৃতিতে বলা হয়, গতকাল রাতে ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাস নামের এক যুবককে সংঘবদ্ধভাবে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলার নজিরবিহীন নৃশংস ঘটনা ঘটে। বান্দরবান, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস হামলার খবরও পাওয়া গেছে। পুরো সময় দেশ ও বিদেশের কিছু চিহ্নিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনফ্লুয়েন্সার এসব হামলায় উসকানি দিয়েছেন। অথচ লম্বা সময় ধরে হামলার ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা ও অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান তৎপরতা দেখা যায়নি।
সম্মিলিত নাগরিক সমাজের পক্ষে বিবৃতি দেওয়া সংগঠনগুলো হলো—গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি, ব্রেইন, ক্ষুব্ধ নারী সমাজ, সম্প্রীতি যাত্রা, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম, জনভাষ্য, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীগণ, টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট, বটতলা-এ পারফরম্যান্স স্পেস, নারীপক্ষ, এএলআরডি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক, ভয়েজ ফর রিফর্ম ও নাগরিক কোয়ালিশন।