বিনোদনসঙ্গী টিভি কেনার আগে...

আপনি কী দেখতে চান? সারা দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে অবসরে বা প্রয়োজনে ষোলো আনা বিনোদন পাবেন ঘরে থাকা টিভি নামক যন্ত্রটিতে। বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, খেলা কিংবা প্রতিদিনের সংবাদ নিয়ে আপনার একান্ত সঙ্গী হয়ে পাশে থাকে টিভিটি। আর এ সঙ্গী মাঝেমধ্যে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতেও পারে। তাই টিভি দেখার সময় বিরক্ত না হতে চাইলে কেনার সময়ই একটু খোঁজখবর, যাচাই–বাছাই করে কিনতে হবে।

টিভি কেনার আগে...

টিভি নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্য নয়, তাই কেনার আগে বেশ কিছু জিনিস দেখে নেওয়া জরুরি। টিভি কেনার আগে অবশ্যই আপনাকে দুটি মুখ্য বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। প্রথমত, আপনি যে টিভি কিনতে যাচ্ছেন, সেটির বাজারমূল্য কত এবং দ্বিতীয়ত, আপনি কোথা থেকে কিনছেন। টিভি কেনার আগে অনলাইন থেকে জেনে বিশ্বস্ত শোরুমে গিয়ে টিভি কিনলে আর সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। এ ছাড়া টিভি কেনার আগে ওয়ারেন্টি সম্পর্কে জানা খুব জরুরি। বর্তমান বাজারে যেসব টিভি পাওয়া যায়, সেগুলোতে দুই ধরনের ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়। একটি ‘পার্টস ওয়ারেন্টি’, অন্যটি ‘সার্ভিস ওয়ারেন্টি’। তাই যেখান থেকে পার্টসের ওয়ারেন্টি পাবেন, সেখান থেকেই টিভি কেনার চেষ্টা করুন। কারণ, দাম একটু বেশি হলেও পরবর্তী সময়ে টিভিতে যদি কোনো সমস্যা হয়, বিনা খরচে সেটি ঠিক করা যাবে।
প্রযুক্তিগত দিক

বর্তমানে প্রায় সব টিভিই তৈরি হয় আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে। এ বিষয়ে বাটারফ্লাইয়ের সেলস ডিরেক্টর মকবুল্লে হুদা চৌধুরী জানান, রেজল্যুশনের ওপর ভিত্তি করে বাজারে এলইডি (লাইট এমিটিং ডায়োড), কিউএলইডি (কোয়ান্টাম ডট লাইট-এমিটিং ডায়োড) এবং ওএলইডি (অর্গানিক লাইট-এমিটিং ডায়োড) টিভি পাওয়া যায়। উজ্জ্বল ছবি চাইলে কিউএলইডি টিভি বেছে নিতে পারেন। কারণ, এটিতে ছবি বার্ন হয় না, ওএলইডি থেকে তুলনামূলক দাম কম, স্থায়িত্ব বেশি এলইডি থেকে। অন্যদিকে সবচেয়ে ভালো রেজল্যুশনের ও সাউন্ড পাওয়া যাবে ও এলইডি টিভিতে। এগুলোর মান ভালো বলে দামও কিছুটা বেশি। কম বাজেট বা ‘মিড রেঞ্জে’র মধ্যে আছে এলইডি। ডিসপ্লে প্যানেল পুরুত্ব কম হয় বলে এলইডি টিভি বেশ পাতলা হয়।

আপনার জন্য কোন টিভি

বাজারে হাজারো টিভি, কোনটা রেখে কোনটা কিনবেন? অনেকেই টিভি কিনতে গিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। বাজারে থাকা হরেক রকম ব্র্যান্ড থেকে নিজের পছন্দের টিভি কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। আর এ জন্য ক্রেতাদের বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য কোনো ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা রাখা উচিত। নিজের জন্য টিভি কেনার আগে এ বিষয়ে যথেষ্ট পরিমাণ খোঁজখবর নেওয়া এবং বাজার সম্পর্কে ধারণা রাখা খুব জরুরি।

স্মার্ট টিভির সুবিধা

ইন্টারনেট–সুবিধা আছে—এমন টিভিগুলোই স্মার্ট টিভি নামে পরিচিত। স্মার্ট টিভিতে ইন্টারনেট যুক্ত করে বিভিন্ন অ্যাপ ইনস্টল করা যায়। ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের টিভি, ভিন্ন ভিন্ন অ্যাপ ও সেবা সমর্থন করে। মূলত তিন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম আছে স্মার্ট টিভিতে। স্মার্ট টিভির সুবিধা সম্পর্কে বাটারফ্লাইয়ের সেলস ডিরেক্টর মকবুল্লে হুদা চৌধুরী জানান, ‘স্মার্ট টিভির সঙ্গে মোবাইল ফোন ও ট্যাব যুক্ত করা যায়। ফলে মোবাইল ফোন ও ট্যাবে থাকা কনটেন্ট টিভির পর্দায় উপভোগ করা যায়। মোবাইলে থাকা গান শুনতেও টিভির স্পিকার কাজে লাগানো যায়। কিছু কিছু স্মার্ট টিভি থেকে মোবাইলে কনটেন্ট পাঠানো যায়।’  

বর্তমানে স্মার্ট টিভিগুলো অনেক কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন ডিশ কেব্‌ল, স্যাটেলাইট চ্যানেল, ওয়াইফাইসহ আরও অনেক কিছু। তাই টিভি কেনার আগে আপনাকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভালো করে দেখতে হবে, সেটি হচ্ছে পোর্টসংখ্যা। এসব পোর্ট সঠিক আছে কি না, তা ভালো করে যাচাই করে দেখে টিভি কিনতে হবে।

আর টিভির সাউন্ডের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। ঘড়ঘড়ে অডিও কিংবা বিরক্তি উৎপাদন করে এমন সাউন্ড হলে টিভি দেখা তখন আর বিনোদন থাকবে না, বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

যত্নআত্তি

যত্নে ভালো থাকে যেকোনো কিছুই। টিভির ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। প্রতিটি টিভিরই নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। ব্রাইটনেস বাড়িয়ে রাখবেন না। তাতে টিভির আয়ু কমে যাবে। নরম কাপড় দিয়ে টিভি পরিষ্কার করা, টিভির চারপাশে সঠিক বায়ু চলাচল স্থাপন করার মতো সহজ কাজগুলো আপনার টিভির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করবে। টিভি ব্যবহার করার সময় ঘরের তাপমাত্রা যতটা সম্ভব ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন। আপনার টিভি পরিষ্কার, ধুলামুক্ত এবং ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা নিশ্চিত করবে যে আপনার ছবির গুণমান আগামী বছরগুলোতে তীক্ষ্ণ এবং প্রাণবন্ত থাকবে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ আপনাকে কোনো বড় সমস্যা হওয়ার আগে সহজে শনাক্ত ও সমাধান করার সুযোগ দেবে।