বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিইআরসির কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা

বিইআরসি লোগো

গত ডিসেম্বর থেকে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এরপর খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়াতে বিতরণ সংস্থার আবেদন নিয়ে গণশুনানিও করেছে কমিশন। এর মধ্যেই নির্বাহী আদেশে দাম বাড়িয়েছে সরকার। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে বিইআরসির চলমান কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।

আজ রোববার কমিশনের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাহী আদেশে সরকারের দাম বাড়ানোর পর করণীয় নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়। কমিশনের দুজন সদস্য এটি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা বলেন, এ মাসেই কমিশনের দাম বাড়ানোর কথা ছিল। হঠাৎ সরকার দাম বাড়ানোয় কমিশনের এখন কিছু করার নেই। তাঁরা সরকারের পরবর্তী কার্যক্রম দেখে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

গত নভেম্বরে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ায় বিইআরসি। এটি ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। গেল ১৪ বছরে দশমবারের মতো এই দাম বাড়ানো হয়। এরপর ডিসেম্বর থেকেই খুচরা দাম বাড়াতে বিইআরসির কাছে আবেদন করে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা। ৮ জানুয়ারি এসব আবেদন নিয়ে শুনানি করে বিইআরসি। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শুনানি–পরবর্তী মতামত জানাতে বলা হয়। এরপর নতুন দাম ঘোষণা করার কথা বিইআরসির। তবে বিইআরসির দাম ঘোষণার আগেই ১২ জানুয়ারি ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে বেড়েছে ৩৬ পয়সা।

দাম বাড়ানোর ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধন করে গত ১ ডিসেম্বর অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনের প্রথম দিন এটি সংসদে উপস্থাপন করা হয়। সংশোধনের সময় বলা হয়েছিল, বিশেষ পরিস্থিতিতে দাম বাড়াবে সরকার। তবে মাত্র তিন দিন পর বিইআরসির মাধ্যমে দাম বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও তা পাশ কাটিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, দাম বাড়ানো নিয়ে শুনানি হয়েছে, তাই কমিশনের নিষ্পত্তি আদেশ দিতে হবে। তবে আপাতত এ–সংক্রান্ত কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। বিইআরসি আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জাতীয় সংসদে অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারি হলে কমিশনের নিষ্পত্তি আদেশ ঘোষণা করা হবে।

দেশের সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। এরপর তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কিছুটা কম দামে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কাছে বিক্রি করে। ঘাটতি মেটাতে পিডিবি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয়। তবে বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো ভর্তুকি পায় না। তারা নিয়মিত মুনাফা করছে। গত অর্থবছরেও মুনাফা করেছে বিতরণ সংস্থাগুলো।

বিতরণ সংস্থার মধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), পিডিবি, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ক্ষেত্রে কিছু মুনাফা ধরে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। আর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ক্ষেত্রে মুনাফা ধরা হয় না। সাধারণত প্রতিটি বিতরণ সংস্থার জন্য শ্রেণি অনুসারে আলাদা মূল্যতালিকা ঘোষণা করে বিইআরসি। তবে নতুন প্রজ্ঞাপনে সব সংস্থার জন্য একই মূল্যতালিকা প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ–সংযোগসহ বিভিন্ন সেবার ফি বাড়ানো হয়েছে একই সঙ্গে।