চট্টগ্রামে রোডমার্চের প্রস্তুতি সভা চলার সময় বিএনপির দুই পক্ষের মারামারি, ১০ নেতা-কর্মী আহত
রোডমার্চ কর্মসূচি সফল করতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভা চলছিল দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের তৃতীয় তলায়। জ্যেষ্ঠ নেতারা যখন বৈঠকে ব্যস্ত, তখন কার্যালয়ের সামনের সড়কে মারামারিতে জড়ান দলের দুটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এ সময় সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন। আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহমদ সড়কে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে এ সময় পুলিশ মারামারি থামাতে এগিয়ে আসেনি।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাক আহমদ খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হকের অনুসারীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে দলীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় সুষ্ঠুভাবে প্রস্তুতি সভা শেষ হয়।
সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আগামী ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে ফেনী, মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিএনপির রোডমার্চ কর্মসূচি হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় এ কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়ে দলের নেতারা আলোচনা করেন। প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
রোডমার্চের প্রস্তুতি সভা ঘিরে মারামারির সূত্রপাত বেলা সাড়ে তিনটার দিকে। এ সময় প্রস্তুতি সভায় যোগ দিতে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাক আহমেদ খান। তখন তাঁর ওপর হঠাৎ হামলা চালান একদল কর্মী। তাঁদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত নেতা–কর্মীদের কয়েকজন সেখানে ছুটে আসেন। তাঁরা হামলাকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এতে মোস্তাকসহ পাঁচজন আহত হন। পাঁচ মিনিট পর আবার দলীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত দুই পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নাসিমন ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি চলছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক গাজী সিরাজ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, পূর্ববিরোধ নিয়ে দুই পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছিল। তাদের শান্ত করা হয়েছে।
বিকেল পাঁচটার দিকে প্রস্তুতি সভা শেষ হওয়ার পর আবার দুই পক্ষ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই সময় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রবিউল আলমের ওপর হামলা চালান এনামুল হকের অনুসারীরা। হামলায় তাঁর মাথা ফেটে যায়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাক আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, বহিরাগত ব্যক্তিরা এনামুল হকের নির্দেশে তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছেন। দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে ত্যাগী নেতারা বাদ পড়ায় প্রতিবাদ করে আসছেন। এ কারণে তাঁর ওপর হামলা করা হয়।
চিকিৎসার জন্য বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন জানিয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক আজ সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার চেক প্রত্যাখ্যান হওয়ায় মোস্তাকের বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি। এসব কারণে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তিনি।’
প্রস্তুতি সভা চলাকালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে দুই পক্ষের মারামারি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কী বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে তা জানি না। এ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।’