বয়ঃসন্ধিকালে কণ্ঠস্বর বদল, থেরাপিতে মুক্তি

থেরাপি নিয়ে এমন সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছেন দিনাজপুরের যুবক রকিব ইমরান।

প্রতীকী ছবি

এস এম রকিব ইমরানের বয়স ২৬ বছর। বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুরে। বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতে কণ্ঠস্বর বদলে যেতে শুরু করে তাঁর। ধীরে ধীরে রকিবের স্বর মিহি, অনেকটা মেয়েদের মতো হয়ে যায়।

বয়স বাড়লেও এ সমস্যা যায়নি। ১৩ বছর ধরে বয়ে বেড়ানো এ সমস্যা থেকে অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন রকিব। ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড স্পিচ থেরাপি নেওয়ার ফলে স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর ফিরে পেয়ে খুশি তিনি। বললেন, এখন আত্মবিশ্বাসও ফিরে এসেছে।

রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে গত ১৭ জুন আয়োজিত ‘স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি পেশার বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং সম্ভাব্য করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে রকিব তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘থেরাপি নেওয়ার পর আমার কণ্ঠস্বর আমি নিজে রেকর্ড করে শুনি। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে এটা আমার কণ্ঠস্বর। বাড়িতে ফোন করলে মা–বাবা বুঝতে পারেননি যে আমি কথা বলছি।’

রকিবের বাবা আবদুল মান্নান দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিটার টেস্টিং সুপারভাইজার। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘১৩ বছর বয়সে রকিবের কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসে। কৈশোরে এমন পরিবর্তন অনেকেরই হয়। তাই আমরা শুরুতে ততটা গুরুত্ব দিইনি। ভেবেছিলাম, বয়স বাড়লে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রকিবের কণ্ঠস্বর একদম মেয়েদের মতো হয়ে যায়।’

কণ্ঠস্বরের এমন পরিবর্তন রকিবের মধ্যে ভীষণ মানসিক চাপ তৈরি করে। আবদুল মান্নান বলেন, একপর্যায়ে রকিব শব্দ করে বই পড়া ছেড়ে দেন। নিচু স্বরে কথা বলতে শুরু করেন। কারও সঙ্গে মিশতে চাইতেন না। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হতো ভাইবার (মৌখিক পরীক্ষা) সময়।

মেয়েদের মতো কণ্ঠস্বর হওয়ায় হরহামেশা ঠাট্টা–মশকরার শিকার হতে হয়েছে রকিবকে। তিনি বলেন, ‘স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় টিটকারির শিকার হয়েছি। অনেক হাসাহাসি করত। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এমনটা কম হয়েছে।’

সমস্যা সমাধানে রকিবকে নিয়ে কয়েকবার নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যান পরিবারের সদস্যরা। একেকজন একেক পরামর্শ দেন। একবার একজন চিকিৎসক বলেছিলেন, অস্ত্রোপচার করলে সমস্যার সমাধান করা যাবে। এ বিষয়ে রকিব বলেন, ‘আশাও দেখেছিলাম, আবার ভয়ও পেয়েছিলাম। কণ্ঠস্বর ঠিক করতে গিয়ে যদি অন্য কোনো সমস্যা হয়, এই ভয়ে পিছিয়ে আসি।’

তবে বসে থাকেননি রকিব। ইন্টারনেট ঘেঁটে সমস্যা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে জানতে পারেন, থেরাপি নিলে স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত মে মাসে একজন চিকিৎসকও তাঁকে একই পরামর্শ দেন। এরপর ঢাকায় এসে বাংলাদেশ থেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ফাউন্ডেশনে চিকিৎসা নেন তিনি।

প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ফিদা আল সামস জানান, রকিব পিউবারফোনিয়ায় ভুগছিলেন। বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনজনিত ত্রুটির কারণে এটি হয়। কণ্ঠস্বর আর স্বাভাবিক না হয়ে মেয়েদের মতো হয়ে যায়। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, কিছু মানুষের বয়স বাড়লেও কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক হয় না। মিহি–ভারী কিংবা শিশুদের মতো রয়ে যায়। এটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য, প্রতিবন্ধিতা নয়। থেরাপি নিলে এই সমস্যার সমাধান হয়। তবে অনেকেই তা জানেন না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক শেষে এখন বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রকিব। থাকেন ঢাকার মিরপুরের একটি ভাড়া বাসায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে ভাইবার সময় অনেক দুশ্চিন্তা হতো। এখন আর হবে না। কণ্ঠস্বর ঠিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার আত্মবিশ্বাসও বেড়ে গেছে।’