চিকিৎসা ও জরুরি ভিসাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে ভারত, গড়ে প্রতিদিন ভিসা পাচ্ছে ১৫০০ বাংলাদেশি

ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভিএসি)
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার বাংলাদেশিকে ভিসা দিচ্ছে ভারত। চিকিৎসা বা অন্য জরুরি ভিসা দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে দিল্লি। তবে বাংলাদেশিদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা ভারত সরকার পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখন পাঁচটি কেন্দ্র থেকে ভিসা দিচ্ছে। নিরাপত্তার বিবেচনায় ১১টি কেন্দ্র থেকে ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র আছে ১৬টি। আজ সোমবার দুপুরে ঢাকায় ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্র কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীর ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র থেকে এখন ভিসা দেওয়া হচ্ছে। বরিশাল, যশোর, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, রংপুর ও ময়মনসিংহ ভিসা কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে।

একজন কূটনীতিক বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চারটি ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রে ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া ঢাকায় ভিসা কেন্দ্রের সামনেও বিক্ষোভ হয়। ওই সময় ধানমন্ডির ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়।

ওই সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে প্রায় ১৬ লাখ বাংলাদেশি ভারতে গিয়েছিলেন। এর অর্থ দৈনিক (ছুটির দিন বাদ দিলে) গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষকে ভিসা দেওয়া হয়। তবে ঈদের সময় দৈনিক আট হাজার বা তার বেশি বাংলাদেশিকে ভিসা দেওয়ার নজির আছে। এখন ট্যুরিস্ট ভিসা ছাড়া অন্য সব ধরনের ভিসা দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ী বা অন্য কারও ক্ষেত্রে ভিসা দেওয়া বন্ধ নেই।

৫ আগস্টের পর চার-পাঁচ দিন ভারত সব ধরনের ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রাখে। তখন অনেক মানুষের পাসপোর্ট বিভিন্ন ভিসা কেন্দ্র ও দূতাবাসে জমা ছিল। সেগুলো মানুষের হাতে দ্রুত ফেরত দেওয়ার জন্য দ্রুত ভিসা কার্যক্রম চালু করা হয় বলে কূটনীতিকেরা জানান।

কিন্তু এখনো চিকিৎসা ভিসা পাওয়ার জন্য অনলাইনে ভিসার আবেদন সহজে জমা দেওয়া যাচ্ছে না বলে সাংবাদিকেরা মন্তব্য করেন। কারণ হিসেবে ভারতীয় ওই কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশের কিছু এজেন্ট ও দালাল আবেদনের পোর্টালে কৃত্রিম জট তৈরি করছেন। প্রকৃত আবেদনকারীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার বিষয়কে কিছু এজেন্ট ও দালাল কঠিন করে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিমধ্যে এ রকম চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে।

ওই কূটনীতিক আরও বলেন, এ ধরনের এজেন্টদের চিহ্নিত করতে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রগুলোতে কিছু কারিগরি ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন আছে, এমন মানুষেরা যেন সহজে ভিসা পান, সেই ব্যবস্থা এখন কেন্দ্রগুলোতে আছে।

দূতাবাস ভিসা দেয়। কিন্তু ভিসার প্রক্রিয়াটি আউটসোর্সিং করা। অর্থাৎ আবেদন ঠিক আছে কি না, কাগজপত্র ঠিক আছে কি না, এসব যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা করে দেয় বাইরের প্রতিষ্ঠান। এরা এখনো পূর্ণশক্তি নিয়ে কাজে নামতে পারেনি। তাই পাঁচটি কেন্দ্রের ওপর চাপ বেশি পড়েছে।

একজন কূটনীতিক বলেন, ভিসার আবেদনের সঙ্গে ভুল বা ভুয়া কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়। সাধারণত দালালেরা এসব করে থাকে। ভারতের হাসপাতালে বা অন্যান্য কার্যালয়ে যোগাযোগ করে ভিসা কর্মকর্তারা আবেদন ও আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া কাগজপত্র যাচাই করেন, ভুয়া কাগজপত্র ও তথ্য শনাক্ত করেন। সাত-আট মাস আগের এক হিসাবে দেখা যায়, ডাবল এন্ট্রি ভিসার ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ আবেদনে ভুল বা ভুয়া কাগজপত্র ছিল। তবে চিকিৎসার ভিসার ক্ষেত্রে এমন হিসাব নেই।