হত্যার পর যাতে চেনা না যায়, সে জন্য মুখ পুড়িয়ে দেয় সাইফুলের

গ্রেপ্তার মাসুক মিয়া (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) ও আল-ইমরান ফয়সাল (ডান থেকে দ্বিতীয়)ছবি: র‍্যাবের সৌজন্যে

সাইফুল ইসলাম ঢাকায় মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করতেন। তাঁর মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নেওয়ার ফন্দি আঁটেন মাসুক ও ফয়সাল। এরপর তাঁরা সংবাদ সংগ্রহের কথা বলে সাইফুলকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার দেওরাজান বালুর চরে নিয়ে যান। সেখানে নির্জন স্থানে তাঁকে হত্যা করেন। এরপর মরদেহটি কার সেটি যাতে না বোঝা যায়, সে জন্য তাঁরা সাইফুলের মুখটি পুড়িয়ে দিয়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যান।

আজ সোমবার ভোরে মাসুক মিয়া (২৯)ও আল-ইমরান ফয়সালকে (৪৪) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে র‍্যাব এ তথ্য জানায়। মাসুকের বাড়ি সুনামগঞ্জে ও ফয়সালের ধামরাইয়ে।

১৪ মার্চ দুপুরে নেত্রকোনার দেওরাজান বালুর চরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলাকাটা মরদেহ দেখে স্থানীয় ব্যক্তিরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ মরদেহটি উদ্ধারের সময় দেখতে পায় নিহত ব্যক্তির গলা কাটা, মাথায় আঘাত, মুখ পোড়ানো। পরে নিহত ব্যক্তির আঙুলের ছাপ থেকে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বড় ভাই বাদী হয়ে মোহনগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

আজ দুপুরে র‌াজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, গ্রেপ্তার দুজন আন্তজেলা মোটরসাইকেল ছিনতাই-চুরি চক্রের সদস্য। নিহত সাইফুল ৩-৪ বছর ধরে মিরপুরে বসবাস করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার ১৫ দিন আগে ফরসালকে মাসুক জানান, তাঁর ভাগিনার একটা চোরাই মোটরসাইকেল দরকার। এ জন্য তিনি ভাগিনার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা এনে ফয়সালকে দেন। ফয়সাল মাসুককে নিয়ে ঢাকায় কয়েকবার মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর নিশানা করেন সাইফুলকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজীপুর চৌরাস্তার একটি দোকান থেকে ছিনতাই করার জন্য ছুরি কেনা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাসুক সাইফুলকে বলেন, তাঁর পরিচিত এক সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহ এবং ভিডিও ধারণের জন্য নেত্রকোনায় যাবেন। সে জন্য ১৩ মার্চ বেলা ৩টায় মিরপুর থেকে মাসুককে নিয়ে রওনা হন সাইফুল। ভাড়া হিসেবে ৩ হাজার টাকাও পরিশোধ করা হয়। পথে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে সাইফুলের মোটরসাইকেলে ওঠেন ফয়সাল।

খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ফয়সাল নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। তাঁর কাছে ‘শেষ খবর’ নামে একটি পত্রিকার পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। যেখানে তাঁর পদবি লেখা গাজীপুর প্রতিনিধি। এক মোটরসাইকেলে তিনজন করে নেত্রকোনার উদ্দেশে রওনা হন। ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছালে মোটরসাইকেলে তিনজন যাত্রী বহনের কারণে ট্রাফিক পুলিশ তাঁদের পথ আটকায়। সেখানে ফয়সাল নিজেকে দৈনিক শেষ খবর পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চলে যান।

নেত্রকোনার ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর সংবাদ সংগ্রহের বাহানা করে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন ফয়সাল ও মাসুক। রাত তিনটার দিকে সুযোগ বুঝে সাইফুলের মাথায় রাস্তার পাশে থাকা ইট দিয়ে আঘাত করেন ফয়সাল। সাইফুল মাটিতে পড়ে অচেতন হওয়ার পর দুজন মিলে তাঁকে গলা কেটে হত্যা করেন। এরপর সাইফুলকে যাতে চেনা না যায়, সে জন্য তাঁর গায়ের শার্ট খুলে তাতে পেট্রল দিয়ে তাঁর মুখ পুড়িয়ে দেন। হত্যায় ব্যবহার করা ছুরি, সাইফুলের মোবাইল পানিতে ফেলে দিয়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যান তাঁরা। পরে মাসুক তাঁর ভাগনের কাছে মোটরসাইকেলটি পৌঁছে দেন।  

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, মাসুক রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় বসবাস করতেন। তিনি দিনে রাজমিস্ত্রির কাজ করে করতেন, আর সন্ধ্যায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রির আড়ালে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতেন।