নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন

জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। কিছু মানুষের অবশ্যই কষ্ট হচ্ছে।

একাদশ জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সংসদে
ছবি: পিআইডি

দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন নির্বাচন নিয়ে কেন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, সে প্রশ্নই তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে যখন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আমরা করছি, তখনই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা, এর অর্থটা কী? আজ দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন?’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন।

কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘অনেক দেশে নির্বাচন তো এখনো তাদের বিরোধী দল মানেইনি। এ রকম তো ঘটনা আছে। তারপরও আমাদের নির্বাচন নিয়ে অনেক সবক শুনতে হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সংসদের বিভিন্ন উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ যত নির্বাচন হয়েছে, সব স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে—এমন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, এর থেকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কবে হয়েছে বাংলাদেশে বা পৃথিবীর কোন দেশে হয়ে থাকে?

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, আগামী অক্টোবরে সংসদের আরেকটি অধিবেশন বসবে। সেটিই হবে চলতি একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশন। এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে যদি জনগণ ভোট দেয়, আবার এদিকে (সরকারি দল) আসব। না দিলে ওদিকে (বিরোধী দল) যাব। কোনো অসুবিধা নাই। জনগণের ওপর আমরা সব ছেড়ে দিচ্ছি।’

তবে দেশের অগ্রযাত্রা ও গণতন্ত্র যাতে ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কেউ যেন জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করতে না পারে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো চক্রান্তের কাছে বাংলাদেশের জনগণ আর মাথা নত করবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে দেখি নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে সবাই সোচ্চার। যেসব দেশ আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে, আর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, পঁচাত্তরের পর থেকে বারবার যে নির্বাচনগুলো হয়েছিল, সেই সময় তাদের এই চেতনাটা কোথায় ছিল? জানি না, তাদের এই বিবেক কি নাড়া দেয়নি?’

২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তখন জনগণ তা মেনে নেয়নি। এরপর ২০১৮ সালে নির্বাচনে তারা (বিএনপি–জামায়াত) নির্বাচনে আসে। বিএনপি বাণিজ্য করে ৩০০ আসনে ৭০০ মনোনয়ন দেয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

মানুষের অবশ্যই কষ্ট হচ্ছে

জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। কিছু মানুষের অবশ্যই কষ্ট হচ্ছে। তবে জিনিসের অভাব নেই। উৎপাদনে ঘাটতি নেই। আন্তর্জাতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কিছুটা হিসাব করে চলতে হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও সংসদে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ব্যাংকের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। টাকা ছাপানো হচ্ছে না। অনেকেই বলছে, টাকা ছাপিয়ে টাকা ছড়ানো হচ্ছে। টাকা ছাপানো একদম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ডলার–সংকট দূর করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, খোলাবাজারে ডলার কেনাবেচার বিষয়টি সরকার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। নিত্যপণ্য আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। ডলারের ওপর চাপ কমাতে ভারতের সঙ্গে লেনদেনে নিজস্ব অর্থে কেনাবেচার চুক্তি করা হয়েছে।

দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাজারে গেলে কোনো জিনিসের অভাব নেই। মনে হয়, কৃত্রিম উপায়ে মূল্য বাড়ানো হয়, ইচ্ছা করে বাড়ানো হয়। অনেক সময় গোডাউনে রেখে দিয়ে কেউ কেউ এ রকম খেলা খেলে। সরকার পদক্ষেপ নিলে কমে আসে।’

বাণিজ্যমন্ত্রীকে বাজার তদারকির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাকে বলা হয়েছে বিশেষভাবে দেখার জন্য, কেন জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে।

ডেঙ্গু প্রসঙ্গ

ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মশা মারতে কামান দাগলে হবে না। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সবাইকে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। কোথাও পানি জমে আছে আছে কি না, তা দেখতে হবে। শুধু সরকার করে দেবে, সিটি করপোরেশন করে দেবে.. গালি দিতে হবে। গালি দিলে তো হবে না। তাদের কাজ তো তারা করে যাচ্ছে। নিজেদের কাজ নিজেদের করতে হবে। কে কী করে দিল, না দিল—ওই কথা বলে লাভ নেই। নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেকেও করতে হবে।’

‘মাঝে মাঝে লোডশেডিং ভালো’

বিএনপির আমলের সঙ্গে বর্তমান সময়ে বিদ্যুৎ উপাদনের তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির সময় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল। এখন ২৫ হাজার ২২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। তবে সময়–সময় কিছু কিছু লোডশেডিং করতে হয়।

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘লোডশেডিং মাঝে মাঝে থাকাটা ভালো। কারণ কী অবস্থায় ছিল, ভুলে যায় তো, তাই মনে করায়ে দেওয়ার দরকার আছে মাঝে মাঝে। সেই জন্য আমি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলি, একটু লোডশেডিং দিলে মানুষের মনে আবার আসবে...। আমরা এ জায়গায় ছিলাম, এই জায়গায় যাচ্ছি—এটা মনে করিয়ে দেওয়া উচিত।’