এডিসের লার্ভার ঘনত্ব ঢাকার চেয়েও বেশি পাশের দুই নগরে

সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে দুই বা তিনতলা বাড়িগুলোয়। বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে পানি ধরে রাখার পাত্রে।

ঢাকার পাশের দুই নগর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের ১৪ শতাংশ বাসাবাড়িতে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার লার্ভা বা শূককীট পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। জরিপটি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি।

এই কর্মসূচির অধীনে এর আগে গত জুন মাসের মাঝামাঝি ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে লার্ভা জরিপ চালানো হয়। সেখানে উত্তরের ২০ শতাংশ ও দক্ষিণের ১৫ শতাংশের বেশি বাড়িতে লার্ভা পাওয়া যায়। ঢাকার চেয়ে এই দুই নগরীর কম বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেছে। তবে ঢাকার ‍তুলনায় এই দুই নগরের কিছু জায়গায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব অনেক বেশি।

লার্ভা জরিপের এই ফলাফলকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ। তিনি বলেন, লার্ভার ঘনত্বের এই উচ্চমাত্রার ফলে ভবিষ্যতে এডিসের প্রকোপ আরও বাড়বে।

গাজীপুরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১১৯ আর নারায়ণগঞ্জে ৩৬৩। দুই জেলায় মৃত্যুর খবর নেই। এই দুই জেলায় বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে গত এক মাসে। কারণ, জুলাইয়ের ১৫ তারিখ পর্যন্ত গাজীপুরে আক্রান্ত ছিলেন ১৬২ জন, নারায়ণগঞ্জে ৩৬ জন।

গত ২৩ থেকে ২৮ জুলাই গাজীপুরে জরিপ করা হয় এবং নারায়ণগঞ্জে জরিপ চলে ২৮ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত। জরিপে দেখা যায়, গাজীপুরে ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জে এর পরিমাণ ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন

গাজীপুরে ১০৫০ বাড়ির মধ্যে ১৫০টিতে লার্ভা

গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪১টিতে জরিপ করা হয়। এসব ওয়ার্ডের ১ হাজার ৫০টি বাড়িতে গিয়ে জরিপ করেন জরিপকর্মীরা। এর মধ্যে ১৫০টি বাড়িতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ‘ব্রুটো ইনডেস্ক (বিআই)’। এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানে সেখানে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব নিশ্চিতভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয় বলে জানান জরিপের নেতৃত্বদানকারী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক প্রধান কীটতত্ত্ববিদ মো. খলিলুর রহমান।

গাজীপুরে জরিপ করা ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে ২৪টির বিআই ২০ বা এর বেশি। ১৪টিতে ১০ থেকে ১৯–এর মধ্যে। বাকি তিনটিতে ১০–এর নিচে।

ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড, এটির বিআই ৮৭। ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে আছে ৪৭, ৫০, ৫৪, ৩৮, ২৯, ২৪, ১৬, ৩৯।

আরও পড়ুন

নারায়ণগঞ্জে ৭০৫ বাড়ির মধ্যে ৯৫টিতে লার্ভা

নারায়ণগঞ্জের ২৭টি ওয়ার্ডের সব কটিই জরিপের আওতায় ছিল। সেখানে ৭০৫টি বাড়িতে জরিপ চালানো হয়। লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৯৫টি বাড়িতে।

নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে ১১টির বিআই ২০ বা এর বেশি। ৭টিতে ১০ থেকে ১৯–এর মধ্যে। বাকি ৯টিতে ১০–এর নিচে।

ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, এর বিআই ১১৩। ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে আছে ২৪, ১৩, ২৭, ১৯, ২০, ২৩, ৫ ও ৪।

রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক প্রধান কীটতত্ত্ববিদ মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঢাকার একটি ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ৮০ বিআই পেয়েছিলাম। সেখানে নারায়ণগঞ্জে সর্বোচ্চ ১১৩। আর গাজীপুরে সর্বোচ্চ ৮৭।’

দুই নগরে সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে দুই বা তিনতলা বাড়িগুলোয়। আর এসব বাড়ির পানি ধরে রাখার পাত্রে বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে খলিলুর রহমান বলেন, বাসিন্দারা বলেছেন, সুপেয় পানির স্বল্পতার কারণে তাঁরা পানি ধরে রাখতে বাধ্য হন।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর চেয়ে এই দুই সিটিতে মশা নিধনের সার্বক্ষণিক উদ্যোগ বা পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। লার্ভা জরিপের ফলাফল বলছে, সেখানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন

যা বলল সিটি করপোরেশন

ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু সেটা জোরদার করতে হবে। এই প্রতিবেদনের ফলাফল জানলাম, কাল থেকে আরও জোরেশোরে কাজ করব।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান (কিরণ) বলেন, ‘আমাদের কাছে জরিপের ফলাফল দেওয়া হলে এলাকাভিত্তিক বিশেষ ব্যবস্থা নেব।’