একসঙ্গে ১২১ কাতারে নামাজ আদায় করবেন ৩৫ হাজার মুসল্লি

জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ৭০০টি সিলিং ফ্যান ও ১০০টি স্ট্যান্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলোর স্বল্পতা এড়াতে ৭০০ টিউবলাইট লাগানো হয়েছে। প্যান্ডেল তৈরি করতে ৪৩ হাজার বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। ১৫ টনের বেশি রশির প্রয়োজন হয়েছে। বৃষ্টি থেকে মুসল্লিদের রক্ষা করতে ১ হাজার ৯০০টি ত্রিপল টাঙানো হয়েছে।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহছবি: প্রথম আলো

রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য ঈদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য ৬টিসহ মোট ১২১টি কাতারে নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় এই ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানা বয়সী মানুষ এ মাঠে নামাজ আদায় করেন। সে কারণে নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে।

জাতীয় ঈদগাহ মাঠ প্রস্তুতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে জাতীয় ঈদগাহে ৩৩০ জন নামাজ আজাদ করতে পারবেন। তাঁদের মধ্যে ২৫০ জন পুরুষ ও ৮০ জন নারীর পৃথকভাবে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা মাঠের সামনের অংশে থাকবেন। জায়গাটি বাঁশ দিয়ে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর সাধারণ মানুষদের মধ্যে ৩১ হাজার পুরুষ আর সাড়ে ৩ হাজার নারী মাঠে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

ঈদগাহ মাঠে প্রবেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য একটি, জনসাধারণের জন্য দুটি (পুরুষদের জন্য একটি ও নারীদের জন্য একটি) ফটক রাখা হয়েছে। ঈদের নামাজ শেষে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা একটি ফটক দিয়ে এবং জনসাধারণ ছয়টি (পুরুষদের জন্য পাঁচটি, নারীদের জন্য একটি) ফটক দিয়ে মাঠ থেকে বের হবেন।

এবার ঈদগাহ মাঠে মোট ১২১টি কাতারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামাজের জন্য ছয়টি (পুরুষের জন্য পাঁচটি এবং নারীদের জন্য একটি) ও জনসাধারণের জন্য ১১৫টি কাতার রয়েছে। জনসাধারণের ১১৫টি কাতারের মধ্যে বড় আকারের ৬৫টি কাতারে পুরুষেরা নামাজ আদায় করবেন। আর নারীরা (পৃথক ব্যবস্থায়) ৫০টি ছোট আকারের কাতারে নামাজ আদায় করবেন। পবিত্রতা অর্জনের জন্য একসঙ্গে ১১৩ জন পুরুষের অজু করার ব্যবস্থা রয়েছে। পৃথকভাবে একসঙ্গে ২৭ জন নারীর অজু করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তীব্র গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে ঈদগাহ মাঠে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত পানি ও লাইটের ব্যবস্থা, খাওয়ার পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসাসুবিধা, ভ্রাম্যমাণ গণশৌচাগার, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ নানা সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এবার নিয়ে মোট ১৭ বার জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতের কাজ করছে পুরান ঢাকার পিয়ারু সরদার ডেকোরেটর। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঈদগাহ মাঠ প্রস্তুত কাজের তত্ত্বাবধানে থাকা মোজাম্মেল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এই মাঠে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নামাজ আদায় করেন। ব্যবসায়িক চিন্তা থেকে নয়, ধর্মীয় বিবেচনা থেকে আনন্দ নিয়ে কাজটি করে যাচ্ছেন তাঁরা।

২৫ দিনে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ শ্রমিক দিনরাত কাজ করে এই মাঠ প্রস্তুত করেছেন বলে জানালেন মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, মাঠের প্যান্ডেল তৈরি করতে তাঁরা ৪৩ হাজার বাঁশ ব্যবহার করেছেন। এতে ১৫ টনের বেশি রশির প্রয়োজন হয়েছে। বৃষ্টি থেকে মুসল্লিদের রক্ষা করতে ১ হাজার ৯০০টি ত্রিপল টাঙানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

২০০০ সাল থেকে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতের কাজটি করে আসছে ঢাকা সিটি করপোরেশন। করপোরেশন দুই ভাগ হওয়ার পর কাজটি করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি (ডিএসসিসি)। করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, এ বছর তীব্র গরমের কারণে মাঠে ৭০০টি সিলিং ফ্যান ও ১০০টি স্ট্যান্ড ফ্যান লাগানো হয়েছে। আলোর স্বল্পতা এড়াতে ৭০০ টিউব লাইট লাগানো হয়েছে। পাশাপাশি মুসল্লিদের জন্য বোতলজাত পানির পাশাপাশি ওয়াসার পানির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদগাহ মাঠের প্রস্তুতি শেষ। ঈদগাহ মাঠে সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৩ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে নিয়ন্ত্রণকক্ষ।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শন করেন ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় ঈদগাহে প্যান্ডেলের ভেতরে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র বলছে, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন জাতীয় ঈদগাহ মাঠে মূল ইমামের দায়িত্বে থাকবেন। আর বিকল্প ইমামের দায়িত্বে থাকবেন বাংলাদেশ সচিবালয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা ওমর ফারুক।