দেনমোহরে বই-ই চাইতাম

বিয়েতে দেনমোহর হিসেবে পছন্দের ১০১টি বই নিয়েছেন বগুড়ার উত্তর চেলোপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক সান্ত্বনা খাতুন। এ ঘটনা আলোচনা তৈরি করেছে। গত শুক্রবার কবি নিখিল নওশাদ ও সান্ত্বনার বিয়ে হয়। দেনমোহরে কেন বই নেওয়া, এই চিন্তা মাথায় এল কীভাবে—এসব নিয়ে সান্ত্বনা খাতুন কথা বলেছেন আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে।

সান্ত্বনা খাতুন

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: দেনমোহর হিসেবে বই নেওয়ার বিষয়টি তো আলোচনা তৈরি করেছে। আপনাকে কেউ কিছু বলেছে?

সান্ত্বনা খাতুন: পরিচিতজনেরা ফোন দিয়ে শুভকামনা জানিয়েছেন। দু-একজন নেতিবাচক মন্তব্যও করেছেন। সব জায়গায় নেতিবাচক কিছু লোক থাকেই। সেসব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

বিয়ের অনুষ্ঠান কেমন হলো?

সান্ত্বনা খাতুন: সাদামাটা আয়োজন ছিল। তেমন কাউকে নিমন্ত্রণ করা হয়নি। কাবিননামায় দেনমোহর হিসেবে ১০১টি বই উল্লেখ করা নিয়ে বেশ বিড়ম্বনা হয়েছে।

প্রশ্ন :

কী রকম বিড়ম্বনা?

সান্ত্বনা খাতুন: বিয়ে নিবন্ধন করতে এক কাজিকে ডাকা হয়েছিল। তিনি পাঠান তাঁর ছেলেকে। ওই ব্যক্তি কাবিননামায় দেনমোহর হিসেবে ১০১টি বই লিখতে অপারগতা জানান।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

পরে কী হলো?

সান্ত্বনা খাতুন: পরে আরেক কাজির কার্যালয়ে গিয়ে বিয়ে নিবন্ধন করানো হয়।

প্রশ্ন :

কাবিননামায় কী লেখা হলো?

সান্ত্বনা খাতুন: বইয়ের সংখ্যা উল্লেখ করে মূল্য বাবদ একটি অর্থ ধরা হয়। বইয়ের সংখ্যাসহ সেই অঙ্কের অর্থ কাবিননামায় দেনমোহর বাবদ লেখা হয়। সব বই নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ১০টি বই তাৎক্ষণিকভাবে হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। নিবন্ধনের পর একজন মৌলভিকে ডেকে বিয়ে পড়ানো হয় রাত পৌনে ১১টায়। এসব বিড়ম্বনায় বিয়ের আনন্দটাই মাটি হয়েছে।

প্রশ্ন :

দেনমোহর হিসেবে বই নেওয়ার বিষয়টি কীভাবে মাথায় এল?

সান্ত্বনা খাতুন: শৈশব থেকেই আমি বইপাগল। হাতে টাকাপয়সা জমলে অলংকার কেনার বদলে বই কিনতাম। আগে থেকেই ভাবনায় ছিল যে যাকেই বিয়ে করি, দেনমোহর হিসেবে বই চাইব।

প্রশ্ন :

১০১টি বইয়ের তালিকায় কী ধরনের বই রয়েছে?

সান্ত্বনা খাতুন: দেশি ও বিদেশি বিখ্যাত লেখকদের বই চেয়েছি। কবিতার বই, উপন্যাস, সমালোচনামূলক লেখা ও অন্যান্য বই রয়েছে।

প্রশ্ন :

সমসাময়িক কোনো লেখকের বই আছে?

সান্ত্বনা খাতুন: ক্ল্যাসিক (ধ্রুপদি) ধারাটা আমার বেশি পছন্দ। তবে তালিকায় সমসাময়িক অনেক লেখকের বইও আছে।

প্রশ্ন :

নিখিল তো ৭০টির বেশি বই খুঁজে পাননি। শেষ পর্যন্ত যদি না পান, কী করবেন?

সান্ত্বনা খাতুন: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১০৮টি নীল পদ্ম খুঁজে আনার কথা বলেছিলেন। আমি চেয়েছি ১০১টি বই। দুজন মিলে খুঁজব। না পেলে পছন্দের তালিকা পাল্টাতে হবে।

প্রশ্ন :

নিখিল ছাড়া আপনার প্রিয় কবি কে?

সান্ত্বনা খাতুন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, নির্মলেন্দু গুণ, রবার্ট ফ্রস্ট, টি এস ইলিয়ট।

প্রশ্ন :

প্রিয় কবিতার চরণ?

সান্ত্বনা খাতুন: ‘The Woods are lovely, dark and deep

But I have promises to keep

And miles to go before I sleep

And miles to go before I sleep’ (রবার্ট ফ্রস্ট)।

প্রশ্ন :

পাঠাগারে (লাইব্রেরি) যাওয়া হয়?

সান্ত্বনা খাতুন: ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি নেশা। টিফিনের (জলখাবার) টাকা জমিয়ে বই কিনতাম। সুযোগ পেলেই কলেজ লাইব্রেরিতে (পাঠাগার) যেতাম।

প্রশ্ন :

আপনি তো বাড়িতে পাঠাগার করতে চান। কত বই থাকবে সেখানে?

সান্ত্বনা খাতুন: অন্তত ১০ হাজার।

প্রশ্ন :

পরিবারে কে কে আছে?

সান্ত্বনা খাতুন: আমার পরিবারে মা, বাবা ও এক বোন রয়েছে। নিখিলের পরিবারে আছে তাঁর মা, বাবা এবং তিন ভাই (নিখিলসহ) ও তিন বোন।

প্রশ্ন :

কবিতা লিখে আপনার স্বামী নিখিলকে নাকি কারাবাসও করতে হয়েছিল।

সান্ত্বনা খাতুন: হ্যাঁ। ২০১৪ সালে একটি ছোট কাগজে নিখিলের কবিতা ছাপা হয়। এরপর প্রতিক্রিয়াশীল একটি গোষ্ঠীর রোষানলে পড়তে হয় তাঁকে। মামলা হয়। প্রায় চার মাস কারাবাসের পর মুক্তি পায়। ২০১৯ সালে মামলার রায়ে আদালত তাঁকে খালাস দেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে হলেও কি বই চাইতেন?

সান্ত্বনা খাতুন: হ্যাঁ। দেনমোহরে বই চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিখিলের সঙ্গে পরিচয়ের আগে থেকেই।