বিচার বিভাগ সংস্কারে আপাতত দুটি বিষয় অগ্রাধিকারে
অধস্তন আদালতে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি ও মামলা ব্যয় কমাতে করণীয় ঠিক করার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে নীতিমালা তৈরি করা—আপাতত প্রাথমিকভাবে এমন দুই এজেন্ডা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।
রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সম্মেলনকক্ষে কমিশনের তৃতীয় বৈঠক শেষে আজ সোমবার কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আগামীকাল মঙ্গলবার কমিশনের পরবর্তী বৈঠক বসার কথা।
বৈঠক শেষে সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেন, ‘আজকে তৃতীয় দিনের মতো আলাপ-আলোচনা হয়েছে। স্থির করেছি এই কার্যক্রম কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব। এ জন্য এজেন্ডা প্রয়োজন। অগ্রাধিকার দিয়ে এজেন্ডা তৈরি করেছি। এর মধ্যে প্রথম এজেন্ডা হচ্ছে অধস্তন আদালত অর্থাৎ জেলা জজ আদালত, সেখানে যে বিচার কার্যক্রম কাজ চলে, সেখানে ত্রুটিবিচ্যুতি দেখতে পেয়েছি। এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। সেখান কীভাবে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা যায়, সে জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বিচারক নিয়োগের ব্যাপারে গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়া, তা আমরা করব।’ তিনি বলেন, মামলা করতে বিচারপ্রার্থী আদালতে এলে একটু দিশাহারা হয়ে যান। বিশেষ করে খরচপাতির জন্য। আর ফৌজদারি মামলা যাঁরা করতে আসেন বা ফৌজদারি মামলায় জড়িয়ে পড়েন, তাঁরা মামলার এ খরচ কুলিয়ে উঠতে পারেন না। সেখানে কীভাবে তাঁদের রিলিফ দেওয়া যায়—এসব নিয়েও পর্যালোচনা করেছি।’
দুটি এজেন্ডার বিষয়ে আগামীকাল থেকে বিস্তারিত আলাপ–আলোচনা করার কথা জানান বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অধস্তন আদালতের মামলা-মোকদ্দমা নিষ্পত্তি কীভাবে ত্বরান্বিত করা যায়, খরচ কীভাবে কমানো যায় এবং মামলার ব্যয় কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করব। সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের ব্যাপারেও আমরা চেষ্টা করব একটি নিয়মনীতি সুপারিশ করার।’
মূলত দুই এজেন্ডা নিয়েই কি কমিশন সামনে এগোবে, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেন, ‘আপাতত প্রাথমিকভাবে। কারণ হলো, এটিই এখন আপনাদের প্রত্যাশা।’ মামলাজট নিরসনের বিষয়টি থাকবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আসবে। এজেন্ডার মধ্যে মামলাজট সম্পর্কে কথা আছে। তবে প্রায়োরিটিতে নিচে আছে।’
কমিশনের কর্মপরিধি ও রূপরেখা নির্ধারণ করেছেন কি না—এমন প্রশ্নে কমিশনের সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘কমিশনের বিবেচ্য বিষয়গুলো ইস্যু বা এজেন্ডা—এগুলো আইডেনটিফাই (চিহ্নিত) করেছি, প্রাথমিকভাবে। দুটি ইস্যুর কথা চেয়ারম্যান বলেছেন। আরও ইস্যু আছে। এজেন্ডা কী হতে পারে, সে ইন্ডিকেশন (ইঙ্গিত) কমিশন গঠনের যে নোটিফিকেশনে বলে দেওয়া আছে। সেটি হচ্ছে স্বাধীন নিরপেক্ষ ও কার্যকর বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার। বিষয়টি অত্যন্ত জটিল এবং ব্যাপক। তবে এখানে খুব সংক্ষেপে হলেও আউটলাইন দেওয়া আছে, বিস্তারিত নেই। এর আলোকেই আমরা চেষ্টা করছি।’
বিচার বিভাগ সংস্কারে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে—এমন প্রশ্নে সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘কিছু চ্যালেঞ্জ তো থাকেই। আমরা ইস্যুগুলো ঠিক করেছি। এই দুটো ইস্যু নিয়ে প্রথমে কাজ করব। আরও বেশ কিছু ইস্যু আসবে। চ্যালেঞ্জের যে বিষয়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা দরকার আছে। তারপর অংশীজনদের মতামত নিতে হবে, কীভাবে কার্যকর হবে। চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করলেই হয় না, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাও করতে হয়। পদ্ধতি আরেকটু উন্নত করা যায় কি না, সেগুলো আমরা বিবেচনা করব।’
বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেন, ‘ওনাদের সেই সময়টা কোথায়, আমাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করার? আমাদের অফিসই তো এখন পর্যন্ত এ অবস্থায় আছে।’ অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বিচার বিভাগীয় সংস্কার করতে হলে তা সময় দিয়ে করা যাবে না। এটি চলমান প্রক্রিয়া। এক একটা সমস্যা আসবে, এটাকে মোকাবিলা করতে হবে। এটা চলতে দেওয়া উচিত।’
এ সময় কমিশনের সদস্য সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাইয়েদ আমিনুল ইসলাম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মাসদার হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’ নামে আট সদস্যের কমিশন গঠন করে ৩ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ৬ অক্টোবর কমিশনের প্রথম বৈঠক হয়।