মো. তানভির
ছবি: সংগৃহীত

আর দশটা তরুণের মতো বড় বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন তরুণ মো. তানভির। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নের পথ ধরে তানভির এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তিও হলেন। এরপরই ছন্দপতন ঘটল। শারীরিক নানা সমস্যায় একসময় হাসপাতালের শরণাপন্ন হতে হলো। অনেক পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান, তাঁর দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে।

মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তানভিরের। পরিবারের অন্যরাও মেনে নিতে পারেন না বিষয়টি। ঢাকা পর্যন্ত গেলেন। সেখানকার চিকিৎসকদেরও একই মত। শেষে সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে তাঁর জীবনপ্রদীপ বাঁচিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত হলো।

মো. তানভির এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিচতলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যানডর বাংলাদেশ ডায়ালাইসিস সেন্টারে সপ্তাহে দুটি ডায়ালাইসিস নেন। সাড়ে তিন বছর ধরে এভাবেই চলছে তাঁর জীবনযাপন। অসুস্থতার কারণে ভেঙে গেছে স্বপ্ন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাদ দেয়নি পড়ালেখা।

মো. তানভির বলেন, ‘ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। ২০১৯ সালে উচ্চমাধ্যমিকের প্রাক্‌–নির্বাচনী পরীক্ষার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি। বুকে ও কোমরের দুপাশে ব্যথা। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এতই অসুস্থ ছিলাম যে চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারিনি। পরে ২০২১ সালে পরীক্ষা দিই। গত বছর এইচএসসির পর আবার অসুস্থ হয়ে যাই। এ কারণে আর কোনো মেডিকেল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিতে পারিনি।’
রহমানিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান মো. তানভির। পটিয়া সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২১ সালে জিপিএ-৪ দশমিক ৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তানভির এখন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মুহসিন কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ছেন।

চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে মো. তানভির সবার ছোট। সবার আদরের। তাঁর অসুস্থতার খবরে পরিবারের সবার মন খারাপ হয়। একসময় কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কারও সঙ্গে কিডনি মেলেনি তানভিরের। ফলে ডায়ালাইসিসই ভরসা এখন।

মো. তানভির তাঁর ভাইদের সঙ্গে হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে যান। বড় ভাই মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তার অসুস্থতার পর আমরা চেষ্টা করেছি ডায়ালাইসিস না করে পারা যায় কি না। কিন্তু হয়নি। তার এটা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ।’

তানভির এখনো স্বপ্ন দেখেন তাঁকে কেউ একটা কিডনি দান করবেন। তিনি ডায়ালাইসিস ছাড়া জীবন যাপন করবেন। ডায়ালাইসিসের খরচ জোগাতেও নানা সাহায্য–সহযোগিতা নিতে হয়। নিজে টিউশনিও করেন। বাবা আমিন জুট মিলে চাকরি করতেন। এখন অসুস্থ। ভাইয়েরাও নিজেদের পরিবারের খরচ জোগাতে হিমশিম খান।

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ডায়ালাইসিসে ভর্তুকি কমিয়ে দিলে সবার মতো বিপদে পড়েন তানভিরও। অন্য রোগীদের সঙ্গে তানভিরও তখন ভর্তুকি বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলন করেন। পরে ভর্তুকি আগের মতো বহাল রাখায় স্বস্তি আসে তানভিরের। এখন প্রতি ডায়ালাইসিস ৫৩৫ টাকায় করেন। ভর্তুকি ছাড়া ডায়ালাইসিস ফি ২ হাজার ৯৮৫ টাকা।

তানভির বলেন, ‘ভর্তুকি না পেলে মরে যেতাম। মামা, ভাই এবং আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকাপয়সা নিয়ে ডায়ালাইসিস চালিয়ে যাচ্ছি। ডায়ালাইসিসে মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ আছে। নিজে ছেলে পড়াই। কোনোভাবে ম্যানেজ করছি। যদি কিডনি কেউ স্বেচ্ছায় দিতে চায়, সবকিছু মিললেও ২০ লাখ টাকার মতো দরকার হবে। এটা হলে ভালো হতো।’