কেবল ঘোষণা হলেই নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হয় না: মহিলা পরিষদ
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা হলেই নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হয় না, নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সেখানে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেছেন, ‘মানবাধিকার আমাদের জীবনের ভিত্তি। একে সাথে করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মানবাধিকারের মূল বিষয়—সমতা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার, যা প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান জনগণ, রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দলকে দায়িত্ব দিয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের সংশোধিত অধ্যাদেশে নারী–সম্পর্কিত কোনো ইস্যু নেই।
আজ বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ২০২৫–এর সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এ সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।
নারীর জীবনের সবচেয়ে সংকট নির্যাতন ও সহিংসতা উল্লেখ করে মহিলা পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘আজকে নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে কথা বলা হয়। নারীর জীবনের সবচেয়ে সংকট নির্যাতন ও সহিংসতা। এই সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্রের ভূমিকা জোরালো—এমনটি বলা যাবে না।’
শুধু মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন না করে নারী আন্দোলনের যে দাবি—নারীর নির্যাতনে না বলুন, সম্পদ-সম্পত্তিতে সম–অধিকার এবং সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন—এসব বিষয়ে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোরালো আহ্বান জানান ফওজিয়া মোসলেম।
স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারীর জীবনের একটি দিকের সঙ্গে আরেকটি দিক মানবাধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। নারীর মানবাধিকার যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেখানে আন্দোলন করতে হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় বাধা নারীর প্রতি সহিংসতা। এই সহিংসতা প্রতিরোধের আন্দোলন নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অন্যতম অনুষঙ্গ। তাই আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষের সঙ্গে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস একাত্ম হয়েছে আজ।
আজ বিভিন্নভাবে নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে মালেকা বানু বলেন, ‘এ দেশে নারীর মানবাধিকার রক্ষায়, নারীমুক্তির জন্য যে রোকেয়া আজ থেকে দেড় শ বছর আগে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তাঁকে নিয়ে আজ নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাষ্ট্র এখানে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, সেটি আজ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে অগ্রসর করার পথে যারা বাধা তৈরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে ঘোষণা পাঠ করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমাজকাঠামো–পদ্ধতি মূলত রীতিনীতি–প্রথা ও পুরুষ আধিপত্যবাদী সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় নারীর অবস্থান এই সমাজে পুরুষের অধীন।
ঘোষণা পাঠ শেষে সংগীত পরিবেশন করেন মাহমুদুল হাসান ও তাঁর দল। আদিবাসী নৃত্য পরিবেশন করেন কালারস অব হিল। নৃত্য পরিবেশন করেন ইপ্সিতা মহোত্তম, মুক্তা ঠাকুর ও তাঁর দল, পাহাড়ি নৃত্য কোরিওগ্রাফি পরিবেশনা কারিশমা সাংস্কৃতিক দল। কবিতা আবৃত্তি করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আইটি কো-অর্ডিনেটর দোলন কৃষ্ণ শীল। সমবেত কবিতা আবৃত্তি করেন সুপ্রভা সেবতি ও তাঁর দল।
সমাবেশ ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সংগঠনের ব্লাস্ট, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেত্রীবৃন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।