নির্বাহী কর্মকর্তাদের ‘বর্ধিত বেতনে’ আটকাল ২৫ পৌরসভার বরাদ্দ

সরকার

দেশের পৌরসভাগুলোর জন্য বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের প্রথম কিস্তির ৪১ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে এই বাজেট বরাদ্দের তালিকায় ২৫টি পৌরসভার নাম নেই। ওই সব পৌরসভার কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাদের বর্ধিত গ্রেডে বেতন দেওয়ায় উন্নয়ন বরাদ্দ আটকে দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

১২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর-২ শাখা থেকে উন্নয়ন বাজেটের নিয়মিত থোক বরাদ্দের প্রথম কিস্তি ছাড় করা হয়। মন্ত্রণালয় জানায়, ৩০৩টি পৌরসভার অনুকূলে ৪১ কোটি ২৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভায় ১৫ থেকে ১৪ লাখ, ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভায় ১৩ লাখ এবং ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভায় ১২ লাখ ১৬ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ পৌরসভার উন্নয়নকাজ ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না।  

দেশে ৩২৮টি পৌরসভা থাকলেও উন্নয়ন বরাদ্দের তালিকায় ২৫টি পৌরসভার নাম বাদ পড়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠিতে কিছু বলা নেই। এসব পৌরসভাকে লিখিতভাবেও কিছু জানানো হয়নি। তবে পৌরসভার কর্মকর্তারা বলছেন, মৌখিকভাবে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, পৌরসভাগুলোর পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সাবেক সচিব পদ) বর্ধিত বেতন নেওয়ায় বরাদ্দ আটকে দেওয়া হয়েছে।  

পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সাবেক সচিব পদ) বেতন গ্রেড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জটিলতা চলছে। দেশের পৌরসভাগুলোর পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাদের বেতন গ্রেড বাড়িয়ে গত ১৭ মে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। তিন কর্মদিবসের মাথায় গত ২২ মে ওই প্রজ্ঞাপন স্থগিতও করা হয়।

বেতন গ্রেডের ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির (ক) শ্রেণি পৌরসভার নির্বাহীদের বেতন ষষ্ঠ গ্রেডে, দ্বিতীয় (খ) শ্রেণির পৌর নির্বাহীদের বেতন সপ্তম গ্রেডে এবং তৃতীয় (গ) শ্রেণির নির্বাহীদের বেতন নবম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বেতন গ্রেড উন্নীত করার ফলে অতিরিক্ত যে অর্থ লাগবে, তা সংশ্লিষ্ট পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে দিতে হবে। এ আদেশ কার্যকর হবে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাদের যোগদানের তারিখ থেকে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের এই প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রজ্ঞাপনটি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এরপর মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তারা। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জুন হাইকোর্ট বিভাগ স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাদের বেতন গ্রেড স্থগিতের আদেশটি স্থগিত করেন।

হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এরপর বেশ কিছু পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তারা বর্ধিত বেতন গ্রেড অনুযায়ী বেতন নেওয়া শুরু করেন। পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা সমিতির তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৭০টির মতো পৌরসভা থেকে বর্ধিত গ্রেডে বেতন নেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তারা।

হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল আবেদন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ আগস্ট আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের আদেশটি স্থগিত করেন। অবশ্য স্থানীয় সরকার বিভাগের আবেদন করার আগেই পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাদের বর্ধিত গ্রেডে বেতন তোলার বিষয়টি ভালোভাবে নেননি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ মন্ত্রণালয়ের বেতন গ্রেড স্থগিতের আদেশ স্থগিত করায় পৌর নির্বাহীরা কেউ এক মাস, কেউ দুই মাস বর্ধিত বেতন নেন। মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে, এ জন্য বরাদ্দ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু ৭০টি পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তারা বর্ধিত বেতন নিলেও শুধু ২৫টির বরাদ্দ কেন বন্ধ রাখা হয়েছে, তা জানা যায়নি।

পৌর নির্বাহী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্ধিত যে বেতন পৌর নির্বাহীরা নিয়েছেন, তা পৌরসভার রাজস্ব হিসেবে ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌর কর্মকর্তারা যে বর্ধিত বেতন নিয়েছিলেন, তা ফেরত দিচ্ছেন। যেমন ২১ সেপ্টেম্বর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বর্ধিত বেতন হিসেবে নেওয়া ৪৪ হাজার ৬০৪ টাকা ফেরত দিয়েছেন।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন শাখার যুগ্ম সচিব মো. সবুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বর্ধিত বেতন গ্রেডের কারণে উন্নয়ন বরাদ্দ বন্ধের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে বেতন-ভাতা বকেয়া, ঋণের কিস্তি বকেয়া, বদলি হওয়া কর্মকর্তাকে যোগদান করতে না দেওয়ায় কিছু পৌরসভার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আলোচনা হয়েছে।

বরাদ্দ না পাওয়া পৌরসভাগুলোর মধ্যে রয়েছে পিরোজপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইল, গৌরনদী, কুয়াকাটা, দোহার, সখীপুর ও মীরকাদিম পৌরসভা। এর মধ্যে কুয়াকাটা বাদে বাকি সব কটিই ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা।