কোরবানিকেন্দ্রিক কেনাকাটায় ব্র্যাক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা কী সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে?
মো. মাহীয়ুল ইসলাম: ব্র্যাক ব্যাংক সব সময় ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে কার্ডে নানাবিধ সুবিধা দেয়। উৎসবের মৌসুমে গ্রাহকদের বাড়তি সুবিধা দিতে আমরা দেশব্যাপী মার্চেন্ট আউটলেটের সঙ্গে চুক্তি করেছি। গ্রাহকদের এই উৎসবের আমেজকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে এবারের কোরবানির ঈদে আমরা ক্রেডিট কার্ডে দিচ্ছি ছাড়, ক্যাশব্যাক, শূন্য শতাংশ ইএমআই সুবিধাসহ আকর্ষণীয় সব সুবিধা। আমাদের ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে গ্রাহকেরা ঈদের কেনাকাটা, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ডাইনিংসহ আরও অনেক কেনাকাটায় সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট উপভোগ করতে পারবেন। দেশজুড়ে এক হাজারের বেশি আউটলেটে আমরা এই সুবিধা দিচ্ছি। ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক ও ইএমআই সুবিধা ছাড়াও আমাদের কার্ড দিয়ে গ্রাহকেরা ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টে ও নানা কেনাকাটায় উপভোগ করবেন ডাবল রিওয়ার্ড পয়েন্ট।
দেশে নগদবিহীন বা ডিজিটাল লেনদেনে অনেকগুলো সেবা চালু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্র্যাক ব্যাংকের ভূমিকা কেমন?
মো. মাহীয়ুল ইসলাম: ব্র্যাক ব্যাংক সব সময় দেশের ব্যাংকিং খাতে ডিজিটাল রূপান্তরের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করেছে। নগদবিহীন লেনদেন বা ক্যাশলেস অর্থনীতির দিকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই যাত্রায় আমরা সক্রিয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছি। আমাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ ‘আস্থা’ গ্রাহকদের সম্পূর্ণ ডিজিটাল ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা দিচ্ছে, যেখানে গ্রাহকেরা ঘরে বসেই অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থাপনা, ফান্ড ট্রান্সফার, এফডিআর-ডিপিএস ওপেনিং, বিল দেওয়াসহ নানা ধরনের ব্যাংকিং সেবা নিতে পারছেন। শুধু ২০২৫ সালের মার্চ মাসেই আস্থা অ্যাপে প্রায় ১৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে মাসিক অ্যাপভিত্তিক ডিজিটাল লেনদেনের এক নতুন দৃষ্টান্ত। আমরা ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কিউআর পেমেন্ট, এনএফসি-ভিত্তিক কার্ড ট্রানজেকশন এবং মোবাইল ওয়ালেট ইন্টিগ্রেশনের সমন্বয়ে একটি বিস্তৃত ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করেছি, যা গ্রাহকদের ক্যাশলেস লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করছে। আমরা ৩৮ হাজার ডিজিটাল ইনস্ট্যান্ট ঋণ দিয়েছি।
আমাদের করপোরেট ও ইনস্টিটিউশনাল গ্রাহকদের জন্য রয়েছে ইন্টারনেট-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘কর্পনেট’। ২০২৪ সালে কর্পনেটের মাধ্যমে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
কার্ড থেকে অ্যাপ—ডিজিটাল সেবার দ্রুত পরিবর্তনও হচ্ছে। গ্রাহকেরা কোনটাকে বেশি গ্রহণ করছেন?
মো. মাহীয়ুল ইসলাম: আমরা সব সময় গ্রাহকদের ট্রানজেকশন-বিহেভিয়ার পর্যালোচনা করি। বর্তমানে আমরা গ্রাহকদের এই ট্রানজেকশন অভ্যাসে স্পষ্ট পরিবর্তন লক্ষ করছি। প্রযুক্তিনির্ভর ও দ্রুত সেবাপ্রত্যাশী গ্রাহকভিত্তি, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এখন মোবাইল অ্যাপকেই বেশি পছন্দ করছেন। দেশে ডিজিটাল লেনদেনের প্রসারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা। আমাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ ‘আস্থা’ গ্রাহকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকেরা যখন ইচ্ছা তখন যেকোনো স্থান থেকে সহজেই ফান্ড ট্রান্সফার, বিল পেমেন্ট, অ্যাকাউন্ট চেক, মোবাইল রিচার্জসহ নানা ধরনের ব্যাংকিং সেবা উপভোগ করতে পারছেন। আমাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ তো অ্যাপভিত্তিক সেবায় বিপ্লব নিয়ে এসেছে।
মোবাইল অ্যাপের জনপ্রিয়তা বাড়ায় ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের ব্যবহার কি কমছে?
মো. মাহীয়ুল ইসলাম: গ্রাহকদের কাছে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক সেবার জনপ্রিয়তা বাড়ছে সত্য, তবে এর মানে এই নয় যে প্লাস্টিক কার্ডের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। অনেক গ্রাহক এখনো বড় অঙ্কের লেনদেনে ই-কমার্স ও ইএমআই সুবিধার জন্য ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডই ব্যবহার করছেন। কাজেই এটি একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটি বেছে নেওয়ার বিষয় নয়—বরং গ্রাহকেরা প্রয়োজন অনুযায়ী উভয় মাধ্যমই ব্যবহার করছেন। আমরা চাই, গ্রাহকেরা যে চ্যানেলই ব্যবহার করুক না কেন, তা যেন হয় স্বাচ্ছন্দ্যময়, ঝামেলাহীন, নিরাপদ ও সুরক্ষিত। এ লক্ষ্যে আমাদের বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ব্যাংকিং সেবা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মো. মাহীয়ুল ইসলাম
ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড রিটেইল ব্যাংকিং, ব্র্যাক ব্যাংক