‘দেড় হাজার টাকায়’ রোহিঙ্গাদের জাল জন্মনিবন্ধন সনদ দিতেন ইসির পিয়ন

জন্মসনদ জালিয়াতিতে গ্রেপ্তার জয়নাল আবেদীন
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে জন্মনিবন্ধন জালিয়াতির মামলায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) থানা কার্যালয়ের বরখাস্ত এক অফিস সহায়ককে (পিয়ন) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নাম জয়নাল আবেদীন (৩৮)। গতকাল সোমবার রাতে নগরের কোতোয়ালি এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।

পুলিশ সূত্র জানায়, জয়নালের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির দুটি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটিসহ চারটি মামলা রয়েছে। দুদকের মামলাগুলো বিচারাধীন, বাকি দুটি তদন্তাধীন। এসব মামলায় তিনি জামিনে ছিলেন।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রামের অতিরিক্ত উপকমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, এনআইডি জালিয়াতির সঙ্গে জন্মনিবন্ধন জালিয়াতিতেও জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন জয়নাল। তিনি রোহিঙ্গাদের জাল জন্মনিবন্ধন সনদ দিতেন। একেকটির জন্য ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা করে নিতেন। প্রাথমিকভাবে এ পর্যন্ত অর্ধশত জাল জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

আসিফ মহিউদ্দীন আরও বলেন, জয়নালকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে তাঁর রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার শুনানি হতে পারে।

এনআইডি জালিয়াতি ধরা পড়ে ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট। সেদিন লাকী নামের এক নারী চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে স্মার্ট কার্ড তুলতে গেলে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে, ওই নারী রোহিঙ্গা এবং টাকা দিয়ে এনআইডি করিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তখন প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় জয়নালসহ অন্যরা জড়িত বলে জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একটি ল্যাপটপসহ জয়নালকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় এবং পরে ডবলমুরিং থানায় নির্বাচন কমিশন মামলা করে। এ ছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জয়নাল ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওই বছরের ১ ডিসেম্বর দুটি মামলা করে দুদক।

জয়নাল আবেদীনের বাড়ি জেলার বাঁশখালীর দক্ষিণ জলদীর আশকরিয়াপাড়ায়। তাঁর বাবা মাছ ধরার ট্রলারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ২০০৪ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে যোগ দেন জয়নাল।

এ বছরের ৮ থেকে ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উত্তর পতেঙ্গা, আন্দরকিল্লা, উত্তর পাহাড়তলী, দক্ষিণ কাট্টলী ও দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের আইডি ব্যবহার করে সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে ৫৪৭টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। গত শনিবার বিষয়টি জানাজানি হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলোর পক্ষ থেকে থানায় জিডি হওয়ার পর ছায়াতদন্তে নামে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।

জালিয়াতির ঘটনায় নগরের খুলশী, হালিশহর ও পাহাড়তলী থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার নগরের লালখান বাজার ওয়ার্ডে ১৩৩টি জন্মসনদ অবৈধভাবে ইস্যু হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এর আগে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সিটি করপোরেশনের জন্মনিবন্ধন আইডি প্রথম বেহাত হয়। ওই দিন দেশের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের অফিশিয়াল সার্ভারের আপগ্রেডেশনের কাজ চলছিল। এ সময় দুর্বৃত্তরা উত্তর পতেঙ্গা, চকবাজার ও দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ১৮টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করে। এর মধ্যে ১২টি ছিল রোহিঙ্গাদের নামে। ওই ঘটনায় পতেঙ্গা ও চকবাজার থানায় তিনটি মামলা করেন সংশ্লিষ্ট জন্মনিবন্ধন সহকারীরা।

জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতির ঘটনায় এ পর্যন্ত হওয়া ছয়টি মামলাই তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। গতকাল জয়নালসহ এসব মামলায় তারা মোট নয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তবে সার্ভার হ্যাক করে, নাকি পাসওয়ার্ড দিয়ে ঢুকে জালিয়াত চক্র জন্মনিবন্ধন ইস্যু করেছে, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।