শিক্ষাক্রম নিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি

নতুন শিক্ষাক্রমের প্রতিবাদ জানানোয় যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই সব ব্যক্তিদের মুক্তি দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ এর পক্ষে ৪০ জন শিক্ষক বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তাঁদের মুক্তি দাবি করেন। এই শিক্ষকেরা বলেছেন, সম্পূর্ণ অন্যায় ও অগণতান্ত্রিকভাবে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে তাঁদের পর্যবেক্ষণও উপস্থাপন করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিনের পাঠানো এই বিবৃতিতে শিক্ষকেরা বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষাবিদ, অভিভাবক, স্কুলশিক্ষক, অ্যাকটিভিস্ট সর্বোপরি নাগরিকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছে। শিক্ষা বিষয়ে যেকোনো নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এমন আলোচনা জরুরি। নতুন শিক্ষাক্রমে বেশ বড় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে এ নিয়ে ব্যাপক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াই হওয়ার কথা।

বিবৃতিতে শিক্ষকেরা বলেন, বর্তমান সরকার তার যেকোনো পদক্ষেপের যেকোনো সমালোচনাকে ‘সরকারবিরোধিতা’ মনে করে। ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। সনাতনী আইনের পরিবর্তে সরাসরি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো নিন্দিত ও দমনমূলক আইনে মামলা ঠুকে দেয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই সমালোচনাকারীকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত কারাগারে পাঠানো হয়। শাসনের এই পদ্ধতি স্বৈরতান্ত্রিক। এতে নাগরিকের কথা শোনার কোনো সুযোগ রাখা হয় না।

বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ক আলাপ-তর্ক-বিরোধিতার কারণে চলতি সপ্তাহে তিনজনকে আটক করে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে, তাদের জামিন না-মঞ্জুর করা হয়েছে। তা ছাড়া সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের দুজন অভিভাবক, একজন শিক্ষা উদ্যোক্তা এবং একজন স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর নামে মামলা করা হয়েছে। এর আগে ভিন্ন একটি মামলায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা বিবৃতিতে শিক্ষক-অভিভাবক-নাগরিকদের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা করে তাদের দ্রুত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
পর্যবেক্ষণ

বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নতুন শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা করে তাদের দুটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। প্রথমটি হলো— নতুন শিক্ষাক্রমের ধরন প্রধানত কার্যক্রম-নির্ভর। প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য এটি সম্ভাবনা তৈরি করতে পারলেও উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য বিজ্ঞান ও গণিতের বিশদ ভিত্তি প্রয়োজন। নতুন শিক্ষাক্রমে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যায়ে বিজ্ঞান ও গণিতকে সীমিত করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও গণিতের সীমিত জ্ঞান দিয়ে উন্নত মেধার মানবসম্পদ গড়ে তোলা অসম্ভব। এটা আত্মঘাতী হয়েছে।

দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ হলো— নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষা-উপকরণের পরিমাণ বেড়েছে। এতে অভিভাবকদের ব্যয়ভারও বেড়েছে। তা ছাড়া শিক্ষকেরা এই পদ্ধতিতে পাঠদানে অপ্রস্তুত রয়েছেন। প্রান্তিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ে এই পদ্ধতির বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হবে। যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে।