আফ্রিকানরাও বাংলা শাসন করেছেন, সেই ইতিহাস অনেকের অজানা

ইতিহাস সংগ্রাহক অধ্যাপক কেনেথ এক্স রবিনস মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন
ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকানরা একসময় এই বাংলায় এসেছিলেন। তাঁরা এই অঞ্চল শাসনও করেছেন। তাঁরা এখন হাবশি নামে পরিচিত। বাঙালিদের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় সেটির জিনগত প্রভাবও আছে এখানে। আফ্রিকানরা যে কেবল ভারত উপমহাদেশে এসেছেন, তা নয়, ভারতীয়রাও আফ্রিকায় গেছেন। কিন্তু এসব ইতিহাস খুব কম মানুষই জানেন। হাবশি শাসকদের কথা অল্পবিস্তর জানলেও তাঁদের সাধারণ মানুষদের ইতিহাস খুব কম জানা যায়। বাংলা ও ভারতে অনেক ইতিহাসই মুছে ফেলা হয়েছে।

‘আফ্রো-দক্ষিণ এশিয়া সংযোগ এবং বাংলায় হাবশী শাসন ও নেপথ্যে’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ইতিহাসবিদেরা এসব তথ্য তুলে ধরেন। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারায় আলোচনা সভার আয়োজন করে কসমস ফাউন্ডেশন।

আলোচকেরা বলেন, ১৪৮৭ থেকে ১৪৯৪ সাল পর্যন্ত ৭ বছর আফ্রিকার সুলতানেরা বা হাবশিরা বাংলা শাসন করেছে। পর্তুগিজ ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী ভারত উপমহাদেশে তাঁদের দাস হিসেবে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। তাঁরা এখানকার সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। একসময় তাঁরা দাস থেকে শাসক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু সেই শাসন ছিল অল্প সময়ের। তাঁরা এখনো বাংলাদেশসহ ভারত উপমহাদেশে রয়ে গেছেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস সংগ্রাহক অধ্যাপক কেনেন এক্স রবিনস। দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে ১৪টি বই আছে তাঁর। দক্ষিণ এশিয়ায় আফ্রিকানদের আগমন, তাঁদের জীবন ও শাসন নিয়ে বিভিন্ন দলিল তুলে ধরেন। তাঁদের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্কও তুলে ধরেন তিনি। কেনেথ এক্স রবিনস বলেন, ‘আমি বলব, ইতিহাসকে বোঝার চেষ্টা করুন। জানলে বাংলা আরও সমৃদ্ধ হবে।’

আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা
ছবি: সংগৃহীত

আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘রবিনস অনেক বছর ধরে মানুষের ইতিহাস খুঁজে বেড়িয়েছেন। তাঁর কাছে দারুণ সংগ্রহ আছে। তিনি আমাদের সামনে প্রশ্ন তুলে ধরেছেন যে আমাদের অতীত সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে হবে। আমরা ইতিহাসের যা হারিয়েছি, সেদিকেও তিনি দৃষ্টিপাত করেছেন, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

মফিদুল হক বলেন, ইউরোপীয়রা এই বাংলা থেকে নারীদের দাস হিসেবে ইউরোপে নিয়ে গেছেন। তাঁদের নির্যাতন করা হয়েছে। যখন ইউরোপে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হয়, তখন বাঙালি নারীদের তাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকায় ফেলে দিয়েছেন। ফলে আফ্রিকা থেকে বাংলায় মানুষ শুধু আসেনি, গেছেও।

গবেষক আফসান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলা ও ভারতের ইতিহাস নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে এখানে ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছে। আমাদের বহুমুখী ইতিহাসকে স্বীকার করা দরকার।’

ইতিহাসবিষয়ক গবেষক রানা হায়দার বলেন, ‘বাংলায় হাবশি শাসন সাত বছর ছিল। তখন খুন, অস্থিরতা ছিল। তাঁরা দাস থেকে সুলতান হয়েছেন। আমরা শাসকদের কথা বললেও সাধারণ মানুষদের দলিল ও তথ্য সংরক্ষণ করি না।’

এ সময় আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হায়দার আলী খান ও কসমস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাহার খান।