নেপাল: হিমালয়ের বুকে জনতার বিজয়

ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।

নেপালের জাতীয় পতাকা

বিজয় মানেই সব সময় বিদেশি শত্রুকে তাড়ানো নয়; কখনো কখনো বিজয় মানে ঘরের ভেতরের স্বৈরাচারী প্রথাকে ভেঙে নতুন দিনের সূচনা করা। আজ ২৮ ডিসেম্বর, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালের ইতিহাসের এক মোড় ঘোরানো দিন। ২০০৭ সালের এই দিনে নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সংসদ এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা হিমালয়ের এই দেশটির ২৪০ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়।

২০০৮ সালে নেপালকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর রাজপথে উল্লাস
ফাইল ছবি: এএফপি

নেপাল দীর্ঘকাল ধরে শাহ রাজবংশের শাসনাধীন ছিল। কিন্তু একুশ শতকে এসে নেপালি জনগণ আর প্রজা হয়ে থাকতে চায়নি, তারা হতে চেয়েছিল নাগরিক। মাওবাদী বিদ্রোহ ও ২০০৬ সালের ঐতিহাসিক গণ–অভ্যুত্থান বা ‘জন আন্দোলন-২’-এর চাপে রাজা জ্ঞানেন্দ্র ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।

এরপর শুরু হয় দীর্ঘ রাজনৈতিক টালবাহানা। অবশেষে ২০০৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সংসদে এক ঐতিহাসিক ভোটাভুটি হয়। সেখানে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে নেপাল হবে একটি ‘ফেডারেল ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক’ বা যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।

এই দিনটি ছিল নেপালি জনগণের ইচ্ছাশক্তির চূড়ান্ত বিজয়। সংসদের এই রায়ের মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়ে যায় যে রাজা এখন থেকে শুধুই একজন সাধারণ নাগরিক। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয় ২০০৮ সালের মে মাসে, কিন্তু ২৮ ডিসেম্বরের এই সিদ্ধান্তই ছিল রাজতন্ত্রের বিদায়ঘণ্টা। কাঠমান্ডুর রাস্তায় সেদিন হাজারো মানুষ নেমে এসেছিল, তাদের স্লোগানে কেঁপে উঠেছিল হিমালয়ের চূড়া।

বিশ্বমানচিত্রে নেপাল

বাংলাদেশের জনগণ যেমন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বারবার রাস্তায় নেমেছে এবং বিজয় ছিনিয়ে এনেছে, নেপালের এই দিনটিও সেই একই চেতনার প্রতিচ্ছবি। ২৮ ডিসেম্বর আমাদের মনে করিয়ে দেয়—রাজপ্রাসাদের দেয়াল যত উঁচুই হোক না কেন, জনতার সম্মিলিত গর্জনের সামনে তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে বাধ্য। এটি ছিল নেপালের আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিজয়।