পাহাড় না কেটেও বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সড়ক করা যেত: চট্টগ্রামের মেয়র

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। চট্টগ্রাম, ১১ জুন
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, পাহাড় না কেটেও বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সংযোগ সড়ক করা যেত। রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে নগরের পাহাড় কাটা রোধে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বক্তব্য দিতে গিয়ে বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে চসিক মেয়র বলেন, ‘আমাদের বান্দরবান-রাঙামাটির পাহাড় অনেক উঁচু। সেখানে পাহাড়ের ওপর রাস্তা হয়েছে। এখানে তো অত উঁচু ছিল না। তাহলে কেন আমরা চিন্তা করলাম না। ব্যক্তির উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে আমরা পাহাড় কেটে রাস্তা করেছি। আমরা একটা পাহাড় নির্মাণ করতে পারব না।’

উল্লেখ্য, ১৫টি পাহাড় কেটে নগরের বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করে সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)। এই পাহাড় কাটার জন্য সিডিএকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। ২০১৫-১৬ সালে এই সড়ক নির্মাণ শুরু হয়।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত কোনো প্রভাবশালীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে, আমি তাঁকে বাঁচাতে চাই, এই চিন্তা বাদ দিতে হবে। পাহাড় কাটার ব্যাপারে যদি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেখানে সবার আগে আমি থাকব। তবে সব দপ্তরের প্রধানদের নিয়ে এই সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। আজকের সভায় সব দপ্তরের প্রধানেরা এলে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো। প্রতিনিধি দিয়ে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।’

দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি দিয়ে কখনো প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করা যাবে না। সম্প্রতি চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা

করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় পাহাড় কাটা-সংক্রান্ত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

পাহাড় কাটা-সংক্রান্ত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। চট্টগ্রাম, ১১ জুন
ছবি: প্রথম আলো

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি দিয়ে কখনো প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করা যাবে না। সম্প্রতি চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। সরকার পাহাড়ে বসতি উচ্ছেদ করে বলে জানায়, কিন্তু সরকার নিজে যখন পাহাড় কাটে, তখন মানুষ আর সরকারি সংস্থার ওপর ভরসা রাখতে পারে না।

একটি গবেষণার বরাত দিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘২০০৮ সাল পর্যন্ত ছোট-বড় ১২০টি পাহাড় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধু পাঁচলাইশ এলাকায় ৭৪ শতাংশ পাহাড় ধ্বংস করা হয়েছে। আকবরশাহ এলাকায় একজন জনপ্রতিনিধি (জহুরুল আলম ওরফে জসিম) নির্বিচারে পাহাড় কেটে যাচ্ছে। আশা করি মেয়র মহোদয় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’

সভায় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক অভিযোগ করেন, এমন কিছু পাহাড় রয়েছে, যেখানে সিডিএ ভবন তৈরির নকশা অনুমোদন করেছে। এ কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের পাহাড় রক্ষার মামলা বা উদ্যোগ হালকা হয়ে যায়।

অভিযোগের জবাবে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম বলেন, তিনটি কমিটির মাধ্যমে নকশা অনুমোদন দেয় সিডিও। এর মধ্যে অথরাইজেশন কমিটি একটি। এরপর কিছুটা জটিল হলে তা বিশেষ কমিটির কাছে যায়। যেগুলো ঝামেলাপূর্ণ, সেগুলো অনুমোদনের জন্য নগর উন্নয়ন কমিটিতে যায়। তবে জনবলের অভাবে অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়।

সভায় ফোরাম ফর প্ল্যানড চট্টগ্রামের সভাপতি মুহাম্মদ সিকান্দর খান, এএলএআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওমর ফারুক প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।

আরও পড়ুন