যাত্রীদের ‘পকেট কাটা’ চলছেই

বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলেও এখনো দূরত্বভিত্তিক ভাড়ার তালিকা হয়নি। বাসমালিকদের বলে দেওয়া ভাড়াই আদায় করা হচ্ছে।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সরকার নির্ধারিত বাসভাড়া মানছেন না পরিবহনের মালিক-শ্রমিকেরা। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার এবং রাজধানীর ভেতরে চলাচলকারী বাসে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। রাজধানীর বাসগুলোতে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ ও ১০ টাকার দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হয়। বাড়তি ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে চালকের সহকারীদের বাগ্‌বিতণ্ডাও চলে।

গতকাল রোববার গাবতলী ও সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘোরেন প্রথম আলোর তিনজন প্রতিবেদক। তাঁরা বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী বাসের চালক, চালকের সহকারী ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। জানা যায়, বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলেও এখনো দূরত্বভিত্তিক ভাড়ার তালিকা (চার্ট) হয়নি। ফলে বাসমালিকদের বলে দেওয়া ভাড়াই আদায় করা হচ্ছে। রাজধানীর ভেতরে ৫ থেকে ২০ টাকা এবং দূরপাল্লার বাসে ৪০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে।

গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড পর্যন্ত দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সরকার নির্ধারিত হিসেবে এই দূরত্বের ভাড়া আসে ৫৫ টাকা। কিন্তু এই পথে চলাচলকারী লাব্বাইক ও এম এম লাভলী পরিবহনে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭০ টাকা। এই বাসগুলোতে এবারের জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আগে থেকেই যাত্রীপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়া আদায় করা হতো।

অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে লাব্বাইক বাসের চালকের সহকারীর সঙ্গে তর্ক করছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. তরিকুল। তাঁর যুক্তি, আগের ভাড়াই বেশি ছিল। এখন আরও টাকা জোর করে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভাই, বাসে উঠলে এত কষ্ট লাগে, মনে হয়, দেশে যাত্রীদের দেখার কেউ নেই। বাসের লোকজন জোর খাটায়ে যত খুশি ভাড়া নিতে পারে।’

বাসভাড়া নির্ধারণের বিষয়টা কমেডির মতো হয়ে গেছে। সরকার একটা বলে দেয়, বাসে উঠলে তার প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হয়।
আনিসুর রহমান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা

কুড়িল থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। নতুন হার অনুযায়ী এই দূরত্বের ভাড়া আসে ৪০ টাকা। এই পথে চলাচলকারী স্মার্ট উইনার পরিবহনের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা করে। যাত্রীপ্রতি সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসভাড়া নির্ধারণের বিষয়টা কমেডির মতো হয়ে গেছে। সরকার একটা বলে দেয়, বাসে উঠলে তার প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হয়। টাকা তো শেষ পর্যন্ত আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পকেট থেকেই বের হয়।’

সরকার গত শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে। মূল্যবৃদ্ধির প্রথম ধাক্কাটি এসেছে পরিবহন খাতে। শনিবার সরকার পরিবহনের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বাসের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ নগর পরিবহনে প্রতি কিলোমিটারে ৩৫ পয়সা ভাড়া বেড়ে এখন ২ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে। এর আগে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ছিল ২ টাকা ১৫ পয়সা। বাস-মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া যথাক্রমে ১০ ও ৮ টাকা।

দূরপাল্লার বাসেও যাত্রীদের পকেট কাটা

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাসের ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সার জায়গায় ২ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। সায়েদাবাদে গিয়ে দেখা যায়, হানিফ পরিবহনের ঢাকা থেকে সিলেটের বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া আগের চেয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ১৩০ টাকা বেড়ে সিলেটের ভাড়া এখন ৭০০ টাকা। এই রুটে সবচেয়ে বেশি ২০০ টাকা বেড়েছে সুনামগঞ্জের ভাড়া। প্রতি সিটের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৮৫০ টাকা। সরকারি হিসাবে এই গন্তব্যের ভাড়া হয় ৮০০ টাকার কাছাকাছি।

এ বিষয়ে টিকিট বিক্রেতা অজয় চন্দ্র শীল প্রথম আলোকে বলেন, ভাড়া বৃদ্ধির চূড়ান্ত তালিকা তাঁদের কাছে আসেনি। তবে মালিকপক্ষ যেভাবে বিক্রি করতে বলেছে, সেভাবেই বিক্রি করছেন।

বরিশাল ও পটুয়াখালী রুটে ভাড়া বেড়েছে ঈগল পরিবহনে। এই বাসে বরিশালের ভাড়া ১০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৫০ টাকা। ৫০ টাকা বেড়ে পটুয়াখালীর প্রতি সিটের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়।