ওসমান হাদি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সিবিয়ন ও সঞ্জয় তৃতীয় দফায় রিমান্ডে

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতফাইল ছবি: প্রথম আলো

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে তৃতীয় দফায় তিন দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া মো. ফয়সালকেও তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার পুলিশের আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশীতা ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, মঙ্গলবার কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে আনা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহম্মেদ পৃথক দুই আবেদনে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সিবিয়ন ও সঞ্জয়ের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, রিমান্ডে থাকাকালে তাঁদের ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা কিছু তথ্য দিলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, হত্যার পর দ্রুততম সময়ে এজাহারনামীয় আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাঁর সহযোগী আলমগীর হোসেন পার্শ্ববর্তী দেশে অবৈধভাবে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যান। বিষয়টি ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া, প্রযুক্তিগতভাবে এবং আসামি সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পাওয়া যায়। সে জন্য আসামিদের পুনরায় সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

অন্যদিকে ফয়সালের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি মো. ফয়সালের দেখানো স্থান থেকে পিস্তল ও গুলি নরসিংদীর তরোয়া বিল থেকে ১৬ ডিসেম্বর উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ধার অস্ত্র ও গুলি ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও বলেন, অস্ত্রের উৎস ও সরবরাহকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ, হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদ্‌ঘাটন এবং ইন্ধনদাতাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার জন্য তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

এর আগে ১৫ ডিসেম্বর সিবিয়ন ও সঞ্জয়কে আটকের কথা জানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরে এ মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ১৮ ডিসেম্বর প্রথম দফায় তিন দিন এবং ২১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। দুই দফা রিমান্ড শেষে ২৬ ডিসেম্বর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।

অন্যদিকে ১৬ ডিসেম্বর র‍্যাব-১১-এর একটি দল নরসিংদী থেকে ফয়সালকে আটক করে। পরে তাঁকে নরসিংদীতে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

ওসমান হাদি হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া ৪ জন সাক্ষীও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অন্য আসামিরা হলেন প্রধান অভিযুক্ত ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির, মা মোসা. হাসি বেগম, ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া আক্তার, তাঁর শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ, রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান নোমানী, মোটরসাইকেলের মালিক মো. কবির ও আমিনুল। তাঁদের মধ্যে ফয়সালের মা-বাবা, স্ত্রী, বান্ধবী, শ্যালক ও আমিনুল আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

১২ ডিসেম্বর ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। এ ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর ওসমান হাদি মারা যাওয়ার পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।