রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে পাশে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি ও যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন

রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) নির্বাচনে বিপক্ষে অবস্থান নেওয়াসহ সামগ্রিকভাবে মস্কোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে পাশে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলোচনায় ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতেরা এ অনুরোধ জানিয়েছেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপের কূটনীতিকদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ঘণ্টাখানেকের আলোচনায় মাসুদ বিন মোমেন রাশিয়া থেকে খাদ্য ও সার আমদানির বিষয়ে তাঁদের মনোভাব জানতে চেয়েছিলেন। আলোচনায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, ইইউসহ ইউরোপের কূটনীতিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছেড়ে যাওয়ার সময় ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা করি। রাশিয়া ইউক্রেনের আগ্রাসন চালানোর ফলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে প্রভাব পড়েছে। দুই পক্ষ বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছে, সেটি একে অন্যকে জানানোর প্রয়োজন আছে। সেখানে অনেক কিছু দ্রুত ঘটছে।’

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সৃষ্ট সংকটে ইউরোপের দেশগুলো নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। বাংলাদেশও এই পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছে, সেটি তাদের জানিয়েছে।

আগামী মাসে আইকাওয়ের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রার্থিতার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আপত্তি রয়েছে, সেটি পররাষ্ট্রসচিবের কাছে তুলে ধরেছেন ইউরোপীয় কূটনীতিকেরা। ওই নির্বাচনে বাংলাদেশও এশিয়া থেকে কাউন্সিল সদস্য হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

আরও পড়ুন

আলোচনায় পররাষ্ট্রসচিব রাশিয়া থেকে খাদ্যপণ্য ও সার আমদানির বিষয়ে ইউরোপীয় কূটনীতিকদের মনোভাব জানতে চেয়েছিলেন। তখন ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতেরা জানান, খাদ্য ও সারের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তখন পররাষ্ট্রসচিব তাঁদের জানান, এসব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে।

বৈঠকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চলমান পরিস্থিতির বিষয়েও রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করেন পররাষ্ট্রসচিব। ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন সন্ধ্যায় তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাশিয়া–ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপের কূটনীতিকেরা তাঁদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। আমরা এই পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছি, সেটা তাঁদের জানিয়েছি।’

পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে কী নিয়ে কথা হয়েছে, জানতে চাইলে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন বলেন, ‘আমরা মূলত ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিশেষ করে ইউক্রেনে অন্যায় রুশ আগ্রাসন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে যে প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছি।’

তিনি জানান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মিয়ানমারের রাখাইনের অবনতিশীল পরিস্থিতির প্রসঙ্গটি আলোচনায় তুলেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি যে বাংলাদেশকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, সেটিও তিনি উল্লেখ করেন।

রবার্ট ডিকসন বলেন, পররাষ্ট্রসচিব রাখাইনের বিষয়টি তুলে ধরার পর ইউরোপীয় কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না। তখন পররাষ্ট্রসচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাখাইনের অবনতিশীল পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়েছেন। এ সমস্যা সমাধানে তিনি ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন। ভারত এ সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রাখাইনে এই মুহূর্তে যে অবনতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং এর জের ধরে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা তাঁদের কাছে জানিয়েছেন।