বিজয়ের ডিসেম্বর দেশে দেশে
তাইওয়ান: আইনের শাসনের বিজয়
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
২৫ ডিসেম্বর দিনটি বিশ্বজুড়ে বড়দিন বা ক্রিসমাস হিসেবে পরিচিত হলেও পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ তাইওয়ানে দিনটির গুরুত্ব সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে দিনটি পালিত হয় ‘সংবিধান দিবস’ হিসেবে। ১৯৪৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন ‘রিপাবলিক অব চায়না’র সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। তাইওয়ানের আধুনিক ইতিহাসে দিনটি গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের বিজয়ের প্রতীক।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ঠিক পরপরই যখন চীন ও তাইওয়ান এক অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন একটি লিখিত সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। নানজিংয়ে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে দীর্ঘ আলোচনার পর এই সংবিধান পাস করা হয়। এটি ছিল সেই মুহূর্ত, যখন সামরিক শাসন বা একনায়কতন্ত্রের বদলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তী কয়েক দশক তাইওয়ানে সামরিক আইন বলবৎ ছিল, কিন্তু এই সংবিধানই ছিল সেই বাতিঘর, যা গণতন্ত্রকামী মানুষকে পথ দেখিয়েছে।
১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে যখন তাইওয়ানে গণতন্ত্রের বাতাস বইতে শুরু করে, তখন এই সংবিধানের পূর্ণ বাস্তবায়নই হয়ে ওঠে জনগণের প্রধান দাবি। আজকের আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ তাইওয়ানের ভিত্তি সেই ১৯৪৬ সালের ২৫ ডিসেম্বরেই রচিত হয়েছিল। তাইপের প্রেসিডেনশিয়াল অফিস বিল্ডিং বা জিয়েগাও চত্বরে এই দিনে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। যদিও এখন আর দিনটি সরকারি ছুটির দিন নয়, তবু রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের বিজয়ের ইতিহাসের সঙ্গে এই দিনের একটি গভীর মিল রয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের পরপরই ১৯৭২ সালে আমরা পেয়েছিলাম আমাদের সংবিধান, যা ছিল লাখ লাখ শহীদের রক্তের দলিল। তাইওয়ানের ২৫ ডিসেম্বরও সেই একই বার্তা দেয়—একটি জাতির সত্যিকারের বিজয় কেবল ভূখণ্ড দখলে নয়, বরং তা নাগরিকদের অধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্যেই নিহিত। ২৫ ডিসেম্বর তাই তাইওয়ানে স্বৈরাচারকে হটিয়ে গণতন্ত্রের বিজয়ের এক উজ্জ্বল স্মারক।