বিশিষ্ট শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে শুরু ‘ভূমির’ যাত্রা

উদ্বোধনের পর প্রদর্শনী ঘুরে শিল্পকর্ম দেখেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। লালমাটিয়া, ঢাকা, ৫ মার্চছবি: দীপু মালাকার

দেশের বরেণ্য শিল্পীদের শিল্পকর্মের যৌথ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে বসন্তের সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হলো আরেকটি আর্ট গ্যালারির। রাজধানীর লালমাটিয়ার ডি ব্লকের ৬/৪ নম্বর বাড়ির দোতলায় ‘ভূমি’ নামের এই গ্যালারিতে শুরু হয়েছে ‘আর্টিফাইং দ্য সোল’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ মঙ্গলবার প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদীপ প্রজ্বালন করে গ্যালারি ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, লালমাটিয়া একসময় অনেক গাছপালাশোভিত সুন্দর একটি এলাকা ছিল। এখন বহুতল ইমারতে ভরা এই এলাকায় নতুন করে অনেক আর্ট গ্যালারি হচ্ছে। শিল্পের জগৎ গড়ে উঠছে। এটা আশার কথা।

সব মানুষের ভেতরেই অনেক রকম সম্ভাবনা থাকে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, যে বিষয়টির প্রতি যে মানুষের বেশি আগ্রহ সৃষ্টি হয়, প্রেরণা ও সহায়তা পায়, সেই সম্ভাবনাই বিকশিত হয়। শিল্পীরা তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে শিল্পী হয়েছেন, কিন্তু শিল্পকলার বিকাশের জন্য সংগঠক ও সমালোচকের সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। সমঝদার দর্শকের সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। ভূমি একটি সুন্দর আর্ট গ্যালারি হয়ে উঠতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট শিল্পী মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে একটা সময় শুধু ছবি এঁকে একজন শিল্পীর বেঁচে থাকা খুবই কঠিন ছিল। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। চারুকলা শিক্ষার অনেক প্রতিষ্ঠান হয়েছে। বহু শিক্ষার্থী শিক্ষা নিয়ে নানা রকম কাজ করছেন। জনগণের মধ্যে শিল্পরুচি তৈরিতে তাঁরা ভূমিকা রাখছেন, শিল্পকলার প্রসার হচ্ছে। সমাজের বিকাশের জন্যও এটা জরুরি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট শিল্পী বীরেন সোম গ্যালারি ভূমির সাফল্য কামনা করেন।

স্বাগত বক্তব্যে এই গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সাইফুর রহমান বলেন, শৈশব থেকেই তাঁর চারুকলায় শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে চারুকলার প্রতি অনুরাগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় শিল্পীদের সঙ্গে তার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সে থেকেই এই গ্যালারি প্রতিষ্ঠার ভাবনা কাজ করেছে। গ্যালারিতে শিল্পকলার প্রদর্শনীর পাশাপাশি, শিল্পীদের নিয়ে কর্মশালা, আর্টক্যাম্প আয়োজন ও শিশুদের জন্য একটি ব্যতিক্রমী আর্ট স্কুল করার পরিকল্পনা তাঁর রয়েছে।

‘আর্টিফাইং দ্য সোল’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীতে সমরজিৎ রায় চৌধুরী, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, হামিদুজ্জামান খান, আব্দুস শাকুর শাহ, বীরেন সোম, আবুল বারক আলভী, অলকেশ ঘোষ, মনসুর উল করিম, তরুণ ঘোষ, নাইমা হক, মোহাম্মাদ ইউনুস, নাসিম আহমেদ নাদভী, জামাল আহমেদ, রেজাউন নবী, রণজিৎ দাশ, সমর মজুমদার, আহমেদ শামসুদ্দোহা, আইভি জামান, শিশির ভট্টাচার্য৵, শেখ আফজাল, কনকচাঁপা চাকমা ও মোহাম্মদ ইকবালের মোট ৫২টি শিল্পকর্ম রয়েছে।

শিল্পীরা এসব কাজে নিজস্ব অঙ্কনশৈলীতে তাঁদের নান্দনিক ভাবনার পরিস্ফুটন ঘটিয়েছেন। দর্শকেরা শিল্পীদের বিভিন্ন মাধ্যমে আঁকা এই শিল্পসম্ভারে দেশের সমকালীন চিত্রকলার পরিচয় পাবেন। প্রদর্শনী চলবে ১১ মার্চ অবধি। খোলা থাকবে বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত।