এক বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে নগরবাসী: চট্টগ্রামের মেয়র

টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় চট্টগ্রাম সিটির বারইপাড়া এলাকায়
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

নগরে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সমন্বয় করছে না অভিযোগ তুলে সপ্তাহ কানেক আগে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এখন তিনি আগের সেই অবস্থান থেকে সেরে এসেছেন।

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর দাবি, তাদের সবার মধ্যে (সিডিএ ও সিটি করপোরেশন) সমন্বয় আছে। এবার অতি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা হয়েছে। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া প্রকল্পগুলোর কাজ এক বছরের মধ্যে শেষ হলে নগরবাসী জলাবদ্ধতার কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন।

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্তঃদপ্তর সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এসব মন্তব্য করেন। সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই সভা হয়।

সমন্বয় সভায় চট্টগ্রামের সেবা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএর চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম সভায় উপস্থিত ছিলেন না। এবারের সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ছিল না।

গত ৪ থেকে ৭ আগস্ট টানা চার দিন চট্টগ্রাম নগরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কোনো কোনো এলাকায় টানা চার দিন পর্যন্ত পানি জমেছিল। এ সময় মেয়রের বাড়ির উঠান ও সামনের সড়কও ডুবে গিয়েছিল।

সমন্বয় সভা শেষে এবারের জলাবদ্ধতার কারণ জানতে চাইলে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এবার যে পানি উঠেছে, সেটি আপনারা (সাংবাদিক) জলজট বলেন বা জলাবদ্ধতা বলেন— এটা হওয়ার একমাত্র কারণ বিগত ৩০ বছরে এমন প্রবল বৃষ্টি এই অঞ্চলে হয়নি। বৃষ্টিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলাতেও বন্যা হয়েছে।’

আরও পড়ুন

সবচেয়ে বড় প্রকল্পের ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পরও কেন এমন জলাবদ্ধতা— এই প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। অনেক খালের মাটি এখনো পুরোটা তোলা হয়নি। রেগুলেটরের (জোয়ার প্রতিরোধক ফটক) কাজ পুরোপুরি চালু হয়নি। পাম্প হাউসের কাজ শেষ হয়নি। তাই জোয়ারের পানি নগরে ঢুকে পড়েছে। যদি এগুলো পুরোপুরি শেষ হতো, তাহলে প্রবল জোয়ারের পানি শহরে ঢুকতে পারত না।’

রেজাউল করিম চৌধুরী আরও বলেন, ‘আগামী এক বছরের মধ্যে এসব কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা থেকে হয়ত মুক্তি লাভ করতে পারব। ’

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ দুটি, সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি করে মোট চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। গত ছয় বছরে খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

অবস্থান বদলালেন মেয়র

চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে সিডিএ সমন্বয় করছে না অভিযোগ তুলে ক্ষোভ জানিয়ে গত ৬ আগস্ট ফেসবুকে পোস্ট দেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি লিখেন, ‘এই প্রকল্পে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নেই। তারা (সিডিএ) করপোরেশনকে কোনো কিছুই জানায়নি। ইচ্ছামতো কাজ করছে। এত বড় একটি প্রকল্প, চট্টগ্রামবাসীর বাঁচা-মরারও প্রশ্ন, এরপরও তারা সমন্বয় করছে না।’

এর পর গত ৯ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম সিটি করপোরেশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতার কাজ ঠিকভাবে করতে না পারায় তার দায়িত্ব সিডিএকে দেওয়া হয়েছে। মেয়রও ভুল তথ্য দিয়ে সিডিএকে দোষারোপ করছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে সিডিএর কোনো গাফিলতি নেই।

সিডিএ চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সমন্বয় সভা শেষে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন,  ‘অনেক সময় কথা বলতে গিয়ে স্লিপ অব টাং (মুখ ফসকে) করে অনেক কথা বলে ফেলেন। অনেকেই বক্তব্য দিতে গেলে অনেক ভাষা চলে আসে। হয়ত সিডিএ চেয়ারম্যান সাহেবও কথার ছলে বলে ফেলছেন। আমরা দৃঢ়ভাবে না ধরে, এটাকে সহজভাবে যদি ধরে নিই, সক্ষমতা তো আছেই। প্রত্যেক সংস্থারই আছে। উনি (সিডিএ চেয়ারম্যান) হয়ত বলার ফাঁকে বলে ফেলেছেন। এটা নিয়ে টানাহেঁচড়া না করা ভালো।’

আরও পড়ুন

 সমন্বয়ের দাবি মেয়রের

সবার সঙ্গে সমন্বয় রয়েছে দাবি করে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, কোনো সংস্থাকে দায়ী করার জন্য কথা বলি না। কারণ, কাজ করলে ভুল-ত্রুটি থাকবে। আমরা জোর দিচ্ছি সমন্বয়ের ওপর। সমন্বিতভাবে কাজ করলে সফলতা আসবে। সমস্ত দায়-দায়িত্ব আমাদের সবাইকে নিতে হবে। আমাদের মধ্যে সমন্বয় হচ্ছে।’

প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও পানি উঠবে উল্লেখ করে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আরও বলেন, ‘উন্নত শহরগুলোতেও পানি উঠছে। এখন কাজ হবে, এই পানি কত দ্রুত নিষ্কাশন করা যায়, সেটির ব্যবস্থা করা।’ তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। স্বাভাবিক মানুষ সিটি করপোরেশনের দিকে আঙুল তুলবে। যেহেতু এখানে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা আছেন। তাঁরা ভালো যেমন বলবেন, তেমনি খারাপেরও সমালোচনা করবেন।’

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হোসেন খান, সিডিএ সচিব মিনহাজুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আ ম ম হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু রায়হান, নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এম এ মাসুদ প্রমুখ।

আরও পড়ুন