ঝড় শেষে কর্মচঞ্চল শুঁটকিপল্লি

ঝড় থেমে গেছে, রোদ উঠেছে। ব্যস্ত শুঁটকির মহাল। কক্সবাজার, ১৫ মে
ছবি: প্রথম আলো

কালো মেঘ সরে গেছে। নেই ঝড়-বাতাসের দাপট। দুই দিন পর দেখা মিলেছে সূর্যের। ঝলমলে আকাশ। সকাল থেকেই রোদের তেজ বাড়ছিল একটু একটু। এমন পরিবেশে কাজে নেমে পড়েছেন শুঁটকিপল্লির শ্রমিকেরা। তাঁদের কেউ মাচায় শুকাতে দিয়েছেন শুঁটকি। কেউ আড়ত থেকে নিয়ে আসছেন কাঁচা মাছ। আবার কেউ কেউ ব্যস্ত ছিলেন ট্রাক থেকে মাছ নামাতে। তা নিয়ে যাবেন মাচায় শুকানোর জন্য।

সোমবার সকালে এমন চিত্র দেখা গেল কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরার টেক এলাকায়। সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে এই এলাকার অবস্থান। তাই ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে অন্য ব্যক্তিদের তুলনায় এখানকার লোকজনের মধ্যে ছিল অজানা শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত সে ভয় আর আতঙ্ক দূর হয়েছে।

রোববার বিকেলে ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে। সন্ধ্যার মধ্যে কমে যায় বৃষ্টি ও বাতাসের দাপট। এরপর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরতে শুরু করেন এলাকার মানুষ। আজ সকালেও ফিরছেন অনেকে।

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরেছেন আলী আকবর। তাঁর রয়েছে দুটি শুঁটকিমহাল। শনিবার সন্ধ্যায় ফিরেই খবর নেন শুঁটকিমহালের। ঝড় আর বাতাসে অনেক মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যা আছে, সেটিই ভরসা। আলী আকবর বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পেয়ে মাছ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় লোকজন না পাওয়ায় সব মাছ সরাতে পারেননি। তাই অনেক মাছ পচে গেছে। কিছু করার নেই আসলে।

শুঁটকি নাড়ছেন এক নারী। কক্সবাজার, ১৫ মে
ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড়ে এই এলাকার বাসিন্দাদের তুলনামূলক কম ক্ষতি হয়েছে। তবে কয়েকজনের ঘরের চাল দেবে গেছে। কারও ঘরের পলিথিনের ছাউনি উড়ে গেছে। আর শুঁটকিমহাল মালিকদের নষ্ট হয়েছে মাছ আর শুঁটকি। এসব ক্ষতি কাটিয়ে এবং শঙ্কা-ভয় দূর করে কাজে নেমে পড়ছেন লোকজন।

শুঁটকিমহালে কাজ করছিলেন শ্রমিক মো. বেলাল হোসেন। তাঁর বাড়ি ১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়ায়। এবারের ঘূর্ণিঝড়ে বেশি ভয় পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ১০ নম্বর বিপৎসংকেত পেয়ে দুই ছেলে–মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান।

ঝড় থামার পর সন্ধ্যায় চলে আসেন। তবে ঘরবাড়ি নষ্ট হওয়ার যে আশঙ্কা করছিলেন, তা হয়নি। ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট হয়নি। এতে স্বস্তিতে আছেন। এখন কাজ শুরু করেছেন।

সকাল থেকেই রোদের তেজ বাড়ছিল একটু একটু। এমন পরিবেশে পেয়ে কাজে নেমে পড়েছেন শুঁটকিপল্লির শ্রমিকেরা। কক্সবাজার, ১৫ মে
ছবি: প্রথম আলো

সোমবার সকালে নাজিরার টেক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে সারি সারি শুঁটকিমহাল। খালি মাচাগুলো পূর্ণ হতে শুরু করেছে। সেখানে এনে রাখা হয়েছে মাছ। শুঁটকিমহালে কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। পাশে থাকা চায়ের দোকান ও মুদিদোকানে বেচাবিক্রি চলছে। দোকানের সামনে স্থানীয় বাসিন্দাদের আড্ডা চলছে সমানে।

চা–দোকানি সৈয়দ হোসেন বলেন, গত দুই দিন খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ঝড়ে কী হয় না হয় তাতে ভয় পাচ্ছিলেন, এ জন্য স্ত্রী–সন্তান নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। আবার ঝড়ের কারণে তিন দিন দোকান বন্ধ রাখতে হয়। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে বড় কোনো বিপদ হয়নি, এ জন্য স্বস্তিতে আছেন।

সকালে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজের ঘরে ফিরেছেন সনজিদা বেগম। সঙ্গে ছিলেন স্বামী মো. আমিন। দুজনই শুঁটকিপল্লিতে কাজ করেন। তিন মেয়ে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও ফিরেছেন একা। মেয়েদের রেখে এসেছেন বোনের বাড়িতে। সনজিদা বেগম বলেন, ঝড়ে তাঁর পলিথিন আর বেড়ার তৈরি ঘর দেবে গেছে। পলিথিনও উড়ে গেছে। ঘরের অবস্থা ভালো নয়। তাই মেয়েদের বোনের বাড়িতে রেখে এসেছেন। কিন্তু ঘর কীভাবে ঠিক করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি।