৫ ও ৬ জানুয়ারি পরপর দুদিন রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের ১১ নেতা-কর্মী আহত হয়েছিলেন। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ইটের আঘাতে আহত হন সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম। গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভা করে এ ঘটনায় মাহমুদুল হাসানসহ মোট ছয় শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় লিখিত আদেশ তৈরি করে এ তথ্য জানায় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত ৩ নভেম্বর। পরীক্ষা শেষ হবে ২৩ জানুয়ারি। আজ বুধবার এ বর্ষের ৩০৯ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা ছিল। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

বেলা একটায় সরেজমিনে বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, মাহমুদুল হাসান কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ৪২০ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছেন।

জানতে চাইলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ বশির আহম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে, এ বিষয়ে তিনি জানেন না। প্রতিবেদকের কাছ থেকেই প্রথমবার এমটা শুনেছেন। কর্তৃপক্ষের কেউ বিষয়টি লিখিতভাবে জানালে এমনটি হতো না।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্যসচিব রবিউল হাসান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকেই তাঁরা লিখিত আদেশ তৈরি করে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এর কিছু কাজ এখনো বাকি রয়েছে। তাই বিভাগগুলোতে জানানো হয়নি।

তবে বহিষ্কার আদেশ কবে থেকে কার্যকর হবে বা আজকের পরীক্ষার উত্তরপত্র বাতিল করা হবে কি না, জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি নিশ্চিত নন। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন। বৈঠকের দিন থেকে (সোমবার) এ আদেশ কার্যকর হবে বলে তাঁর ধারণা।

বহিষ্কার হয়েও পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারই প্রথম নয়, এর আগে গত ৩ আগস্ট ছাত্রী হেনস্তার দায়ে বহিষ্কৃত হয়েও পরীক্ষা দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের দুই কর্মী। তাঁরা হলেন ইমন আহম্মেদ ও রাকিব হাসান। তাঁরা ২০২১ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে হেনস্তার দায়ে এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। পরে অবশ্য এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাঁদের পরীক্ষার উত্তরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর সংঘর্ষে জড়ান শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের অনুসারীরা। এর চার দিন পর ১২ শিক্ষার্থীকে ৬ মাসের জন্য সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর বহিষ্কৃত হয়েও দুই মাসের মাথায় ডিসেম্বরে স্নাতকের প্রথম বর্ষের তিন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তখনো তিন বিভাগের প্রধান দাবি করেন, তাঁরা চিঠি পাননি। এই তিন ছাত্রলীগ কর্মী হলেন আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের বর্তমান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. নাঈম, একই বর্ষের বাংলা বিভাগের সাইফুল ইসলাম ও আরবি বিভাগের তৌহিদ ইসলাম।