বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণের পক্ষে অবস্থান ছিল তাজউদ্দীনের

‘তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা-২০২৫’–এ বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনেছবি: প্রথম আলো

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, কৃষকের জীবন সম্পর্কে তাজউদ্দীন আহমদের যথেষ্ট উদ্বেগ ছিল। তিনি প্রধান ফসল ও অর্থকরী ফসলের দামের খোঁজখবর রেখেছেন। একদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে জনজীবনে যে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী, সে সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন। অন্যদিকে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের মূল্যহ্রাস তাঁকে প্রতিনিয়ত উদ্বিগ্ন করেছে। তাঁর এমন সচেতনতা ও উদ্বেগ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণের পক্ষে তাঁর নিশ্চিত অবস্থানের পরিচয় দেয়।

আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা-২০২৫’–এ বক্তৃতাকালে মোহাম্মদ আজম এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তাঁর স্মারক বক্তব্যের বিষয় ছিল ‘তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি: ঐতিহাসিকতা ও রাজনৈতিকতা’। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান।

মোহাম্মদ আজম বলেন, অন্যের জন্য কাজ করার দুর্দান্ত প্রাণশক্তি ছিল তাজউদ্দীন আহমদের। একদিকে তিনি মানুষের নিত্য ও নৈমিত্তিক লঘু-গুরু বিষয়গুলো আমলে আনতে পারতেন, অন্যদিকে জাতীয় রাজনীতির নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলোতেও কার্যকর মতামত দিতেন।

লিখিত বক্তৃতায় মোহাম্মদ আজম বলেন, তাজউদ্দীন আহমদের গণতান্ত্রিক মেজাজ কেবল কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষেত্রে নয়, সামাজিক সম্পর্ক বা বিরোধ-মীমাংসার ক্ষেত্রেও কার্যকর ছিল। রাষ্ট্রকাঠামোর যে দিকগুলো ঔপনিবেশিক সরকারের উত্তরাধিকার হিসেবে রয়ে গেছে, সেগুলোতে বিরাগ দেখানোর কোনো উদাহরণ তাঁর ডায়েরিতে নেই। তিনি বরং চেয়েছেন, এগুলোর কাঠামোগত পরিপক্বতা ও সচলতা অর্জিত হোক, আর আর্থিক হিসাব এবং কর্তব্যনিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় থাকুক।

আরও পড়ুন

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নিয়াজ আহমদ খান বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বিভাজনের রাজনীতির বাইরে এসে কিছু জাতীয় প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরি করা। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থান পর্যন্ত সব কটি গণ-আন্দোলনকে জাতীয় পরিচয়বাহক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি আন্দোলনের পরম্পরা, ধারাবাহিকতা আছে। এর সব কটিই একটি বৃহত্তর জাতীয় দায় ও দায়িত্বের অংশ, জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। তাই এগুলোকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা পরিষ্কারভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদ। তিনি বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধকে যখন শুধু আওয়ামীকরণ করা হচ্ছিল, তখন তাজউদ্দীন আহমদ সেটার বিরোধিতা করেছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ শুধু আওয়ামী লীগের নয়, উনি পুরো জাতির। তাজউদ্দীন আহমদ দলমতের ঊর্ধ্বে একজন রাষ্ট্রনায়ক।

আরও পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা-২০২৫’ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শারমিন আহমদ। ৩০ জুলাই
ছবি: প্রথম আলো

শারমিন আহমদ বলেন, বর্তমান বিশ্বে এই যে সংঘর্ষ, আর সংঘর্ষের মূল কারণ লোভ, ক্ষমতার মিশন। এই হানাহানি–সংঘর্ষের মধ্যে তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন, কীভাবে ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হয়, কীভাবে একতাকে দৃঢ় করে একটা জাতি গঠনে এগিয়ে যেতে হয়। তিনি প্রতিরোধ না করলে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের চুক্তিপত্রে লেখা থাকত, ভারতের কাছে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার যখনই মনে করবে, তখনই ভারতীয় বাহিনীকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে, এটিই ছিল তৃতীয় শর্ত বলে জানান শারমিন আহমদ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ওই শর্তের ভিত্তিতেই ভারতীয় বাহিনীকে প্রত্যাবর্তনের জন্য বলেন।

আরও পড়ুন

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী। এ সময় শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ইতু আহমেদকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী লিমা খাতুনকে বৃত্তি দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। তাঁরা হলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মনির হোসেন, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের নূরুদ্দীন মুহাম্মদ, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের মুমতাহানা হাবীব, অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি বিভাগের নাফিজা এবং ক্রিমিনোলজি বিভাগের আরিফুর রহমান।