৬৭% মানুষের মৃত্যু অসংক্রামক রোগে

দেশে সংক্রামক রোগের প্রকোপ কমে এসেছে। মৃত্যু বাড়ছে অসংক্রামক রোগে।

  • দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ধূমপানে অভ্যস্ত।

  • প্রাপ্তবয়স্কদের ৬ শতাংশ স্থূল।

  • ২০–৭৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৪ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছে।

  • ৩৫ বছরের বেশি বয়সী ৪৫ শতাংশ নারী ও ৩৪ শতাংশ পুরুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে।

প্রতীকী ছবি

দেশে ম্যালেরিয়া, গোদরোগ, কালাজ্বরের মতো সংক্রামক রোগের প্রকোপ কমে এসেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসারের মতো অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এখন দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ হচ্ছে অসংক্রামক রোগে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত কেন্দ্রীয় সেমিনারে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সেমিনার কমিটি গতকাল রোববার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মাসিক এই সেমিনারের এবারের বিষয় ছিল স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও অর্জন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে মূল উপস্থাপনায় বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক মো. আতিকুল হক বলেন, দেশে এখন সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে স্ট্রোকে (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্ত জমাট বাঁধা)। মৃত্যুর দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রধান কারণ যথাক্রমে হৃদ্‌রোগ ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী রোগ।

সেমিনারে উপস্থাপন করা তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ধূমপানে অভ্যস্ত। প্রাপ্তবয়স্কদের ৬ শতাংশ স্থূল, অর্থাৎ তাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, ২০–৭৯ বছর বয়সীদের ১৪ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছে এবং ৩৫ বছরের বেশি বয়সী ৪৫ শতাংশ নারী ও ৩৪ শতাংশ পুরুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।

অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা তুলে ধরে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. আতিকুল হক বলেন, দেশের উপজেলা হাসপাতালগুলোতে অসংক্রামক রোগ কেন্দ্র খোলা হয়েছে, অসংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায় নির্দেশিকা তৈরি হয়েছে, হৃদ্‌রোগ চিকিৎসায় নীতিনির্দেশনা (প্রটোকল) তৈরি হয়েছে, অসংক্রামক রোগের বিষয়ে চিকিৎসক–নার্সসহ মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতিতে জাতীয় ওষুধনীতি, স্বাস্থ্যনীতি ও জনসংখ্যা নীতির বড় ভূমিকা আছে।

এই সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় দর্শক–শ্রোতাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি থাকলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিজের পকেট থেকে বেশি ব্যয় করেন। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর ৬২ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যান। ব্যয় মেটাতে পারবে না বলে ১৬ শতাংশ খানা (পরিবার) চিকিৎসা নেওয়া থেকে বিরত থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় ঢালাও প্রশংসা না করে স্বাস্থ্য খাতের দুর্বল দিকগুলোও আলোচনায় তুলে ধরা দরকার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে পৃথক একটি সেমিনার করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিয়মিত গবেষণা ও প্রকাশনা বাধ্যতামূলক করা হবে।

উপাচার্য জানান, ঢাকায় চিকিৎসকেরা রোগীদের যে ব্যবস্থাপত্র দেন, সেই ব্যবস্থাপত্র গ্রামের রোগীদের জন্য ব্যবহার করেন হাতুড়ে ডাক্তাররা।

মূল উপস্থাপনায় কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমিকা নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ অতিথির বক্তব্য কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ মোদ্দাচ্ছের আলী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের অবস্থা গরিবের ঘরের সুন্দরী বউয়ের মতো হয়েছে। অনেকেই এখন কমিউনিটি ক্লিনিককে তাদের কাজে ব্যবহার করতে চায়।

কেন্দ্রীয় সেমিনার কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারের বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ কে এম মোশাররফ হোসেন দাবি করেন, দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে বিদেশে চিকিৎসা নিতে মানুষ কম যাচ্ছেন।

নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক জাহিদ হাসান।