সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৪২ ধারার প্রয়োজন আছে: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৪২ ধারা (পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি, জব্দ, গ্রেপ্তার) নিয়ে আপত্তি থাকলেও এর আইনের প্রয়োজন আছে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয়। এ ধারা গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য রাখা হচ্ছে না।

আজ শনিবার বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) আয়োজিত সম্প্রচার সম্মেলনে ‘সাংবাদিকতা নীতি-সুরক্ষা-স্বাধীনতা’ শীর্ষক এক আলোচনায় এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে কর্মরত সাংবাদিকেরা আলোচনা সভায় অংশ নেন।

আনিসুল হক বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষায় রাষ্ট্রের ভূমিকার বিষয়টি স্পষ্ট নয়; এমন একটা অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগ যে একেবারে অমূলক, তা–ও নয়। তবে কিছুটা হলেও বর্তমান সরকারের সময় এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। প্রত্যেকের সুরক্ষার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী খুবই সচেতন।

আইনমন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে আপত্তি ছিল। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। আইনটির কিছু কিছু অপব্যবহার হয়েছে, যা সরকার স্বীকারও করেছে। কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন বিবেচনায় যৌক্তিক আপত্তি আমলে নিয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে।

সম্মেলনে দুই পর্বে আলোচনা হয়। প্রথম পর্বে ‘সুরক্ষা ও স্বাধীনতা’ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক শাহনাজ শারমীন। এতে ২২টি টেলিভিশন চ্যানেলের ওপর পরিচালিত জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকে নিয়মিত বেতন পান না। অর্ধেক চ্যানেলে উৎসব ভাতা নেই। মাত্র দুটিতে প্রভিডেন্ড ফান্ড রয়েছে। কোনো টেলিভিশনে সাপ্তাহিক ছুটিও নেই।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাংবাদিকতা হলো কুমিরভর্তি পুকুরে সাঁতার কাটার মতো। রাষ্ট্র সুরক্ষা দিচ্ছে না, অন্যরাও দিচ্ছে না। পছন্দ না হলে বর্জন করছে। গণমাধ্যমের প্রথম শত্রু ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। দেখা যায় প্রধান নির্বাহীর গাড়িচালকের বেতন ২৫ হাজার, কিন্তু ক্যামেরা পারসনের বেতন ১০ হাজার টাকা। সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না। মানুষও গণমাধ্যমকে বিশ্বাস করে না আর। তাই নিজেদের শোধরাতে হবে। দিন শেষে ভালো সাংবাদিকতা টিকে থাকবে।  

গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ক্ষমতাসীনেরা গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ মনে করে থাকে। আবার ক্ষমতা থেকে যখন চলে যায়, তখন গণমাধ্যমকে বন্ধু মনে করে তারা। গণমাধ্যমের বিকাশের জন্য রাষ্ট্রকেও ভূমিকা নিতে হবে। ব্যর্থ হলে দায়ও নিতে হবে রাষ্ট্রকে।

‘গণমাধ্যমকর্মী আইন: ৭০ বছরের অসমাপ্ত যাত্রা’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক মিল্টন আনোয়ার। এতে বলা হয়, এত দীর্ঘ সময়েও আইনটি করা যায়নি। সর্বশেষ খসড়া হয়েছে ১০ বছর আগে। সংসদীয় কমিটিতে আছে দেড় বছর ধরে। খসড়া এ আইনে ধারা আছে ৫৪টি, এর মধ্যে ৩৭টিই গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীবিরোধী। এ ছাড়া মালিকদের এ আইনে রাখা হয়নি, তাই এটি কাজে আসবে না। সূত্রের গোপনীয়তা প্রকাশ করতে বলা হয়েছে এ আইনে।

দ্বিতীয় পর্বে সাংবাদিকতার ‘নীতি’ নিয়ে আলোচনা হয়। এতে সম্প্রচার সাংবাদিকদের পালনীয় নৈতিকতার একটি খসড়া তুলে ধরেন এনটিভির বার্তাপ্রধান জহিরুল আলম। জনস্বার্থ, তথ্যের সত্যতা ও নির্ভুলতা, বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতা, কারও ক্ষতি না করা এবং প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, জবাবদিহি বা দায়বদ্ধতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ডিজিটাল মাধ্যমে নীতি–নৈতিকতা মেনে চলা ও অন্যান্য—এসব বিষয় মেনে চলার নির্দেশনা তুলে ধরা হয়।

দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৪২ ধারা গণমাধ্যমকর্মীরা নিজেদের গায়ে মাখছেন না, এটা সাংবাদিকদের গায়ে এসেই পড়েছে। এমন ধারা সাংবাদিকদের ওপরই প্রয়োগ করা হয়। তাই এটি নিয়ে আপত্তি জানানো হচ্ছে।