সেরা করদাতাকে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের। তবে ট্যাক্স কার্ড পাওয়া সেরা করদাতাদের অভিযোগ, তাঁরা এসব বিশেষ সুবিধার কিছুই পান না। ফলে তাঁদের কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়ছে ট্যাক্স কার্ড।

ট্যাক্স কার্ডের গুরুত্ব কমে আসার বিষয়টি নজরে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। তারা বিষয়টি স্বীকারও করছে। এমন বাস্তবতায় ট্যাক্স কার্ডের সংখ্যা কমানো হচ্ছে। এখন ট্যাক্স কার্ড কমিয়ে কার্ডধারীদের বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে এনবিআর।

এ লক্ষ্যে একটি নীতিমালা করা হচ্ছে। জাতীয় ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা ও জেলাভিত্তিক করদাতাদের পুরস্কার নীতিমালা—দুটিকে একীভূত করে নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এ নিয়ে বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়েছে। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরের মধ্যেই নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে।

ট্যাক্স কার্ডধারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সবাইকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয় না। সে কারণে সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে আগামীবার থেকে সেরা করদাতাদের একটি করে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। সেটির মেয়াদ হবে এক বছর।
শ্রাবণী চাকমা, অতিরিক্ত কর কমিশনার, এনবিআর

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিবছর সারা দেশে ৬৬৬ সেরা করদাতাকে ট্যাক্স কার্ড দিচ্ছে এনবিআর। এ সংখ্যা কমিয়ে ২১৫ করা হচ্ছে। কার্ডের গুরুত্ব বাড়াতে সারা দেশে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে তিন ব্যক্তি এবং চার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ১১ জনকে প্ল্যাটিনাম ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হবে।

এনবিআর থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, কর প্রদানে মানুষকে উৎসাহ দিতে ২০১০ সাল থেকে সেরা করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা সনদ দিয়ে আসছে সরকার। বর্তমানে সেরা করদাতাদের মধ্যে ঢাকার বাইরে জেলাভিত্তিক বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হয় ৩০৫ জনকে। বাকি ৩৬১ জনকে ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হয় জাতীয়ভাবে। খসড়া নীতিমালায় জেলাভিত্তিক করদাতাদের সংখ্যা ৩০৫ থেকে কমিয়ে ১৫২ করা হচ্ছে। আর জাতীয়ভাবে ৩৬১ করদাতার সংখ্যা কমিয়ে করা হচ্ছে ৬৩।

রপ্তানি বাণিজ্যে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবছর সিআইপি কার্ড দিচ্ছে। আবার বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শিল্প মন্ত্রণালয়ও সিআইপি কার্ড (শিল্প) দিচ্ছে। এনবিআর দিচ্ছে ট্যাক্স কার্ড। এত কার্ডের কারণে এগুলোর গুরুত্ব কমে যাচ্ছে।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়, প্রতিটি ক্যাটাগরিতেও ট্যাক্স কার্ড কমানো হবে। যেমন, চিকিৎসক ক্যাটাগরিতে আগে যদি পাঁচজনকে ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হতো, সেটি কমিয়ে একটি কার্ড দেওয়া হবে। এভাবে বেতনভোগী, আইনজীবী, খেলোয়াড়, শিল্পী, অভিনেতা ও সাংবাদিক ক্যাটাগরিতে ট্যাক্স কার্ড কমছে। তবে কয়েকটি নতুন খাত যুক্ত করা হচ্ছে। পর্যটন, সেবা, বিমা ও জুয়েলারি খাতকে ট্যাক্স কার্ডের আওতায় আনা হচ্ছে। খসড়া নীতিমালা থেকে তরুণ করদাতা ক্যাটাগরি বাদ দেওয়া হচ্ছে।

এ নীতিমালায় সেরা করদাতাদের জন্য বিশেষ পাঁচটি সুবিধার সঙ্গে নতুন তিনটি সুবিধা যোগ করা হচ্ছে। নতুন তিন সুবিধা হচ্ছে সেরা করদাতা সচিবালয়ে ঢুকতে পারবেন। সার্কিট হাউসে কক্ষ পেতে অগ্রাধিকার পাবেন। এ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে লেটার অব ইন্ট্রোডাকশন (এলওই) দেওয়া হবে।

বর্তমানে পাওয়া পাঁচটি বিশেষ সুবিধা হলো সেরা করদাতা বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার আয়োজিত সব নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন; বিমান, রেলপথ ও জলপথ ভ্রমণে সরকারি যানবাহনে টিকিট পেতে অগ্রাধিকার পাবেন; পরিবারের পাশাপাশি নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন পেতে অগ্রাধিকার পাবেন; বিমানবন্দরে সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা পাবেন এবং তারকা হোটেলসহ সব আবাসিক হোটেলে বুকিং পেতে অগ্রাধিকার পাবেন।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বলছে, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সেরা করদাতাদের জন্য ট্যাক্স কার্ড প্রবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। এটি দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, অন্যরা যাতে কর দিতে এগিয়ে আসেন, কর প্রদানে উৎসাহিত হন। বিনিময়ে সরকার তাঁদের বিশেষ কিছু সুবিধা দেবে।

কয়েকজন সেরা করদাতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ সুবিধাগুলো রয়েছে কাগজে-কলমে। তাঁরা ওই সব সুবিধা পান না। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সেরা করদাতা নির্বাচিত হই। ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হয় আমাদের। কিন্তু আমরা রাষ্ট্রীয় ও সরকারের অনুষ্ঠানের দাওয়াত পাই না। নাগরিক সংবর্ধনায় দাওয়াত পাওয়া যায় না।’

মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে যাঁরা সেরা করদাতা হন, তাঁরাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পেছনে গিয়ে বসেন। তাঁরা প্রাপ্য সম্মান পান না। দেশে আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় সমানভাবে কার্ড দিচ্ছে। ফলে এসব কার্ডের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে।’

জানা গেছে, রপ্তানি বাণিজ্যে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবছর সিআইপি কার্ড দিচ্ছে। আবার বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শিল্প মন্ত্রণালয়ও সিআইপি কার্ড (শিল্প) দিচ্ছে। এনবিআর দিচ্ছে ট্যাক্স কার্ড। এত কার্ডের কারণে এগুলোর গুরুত্ব কমে যাচ্ছে।

এনবিআরের অতিরিক্ত কর কমিশনার শ্রাবণী চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ট্যাক্স কার্ডধারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সবাইকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয় না। সে কারণে সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে আগামীবার থেকে সেরা করদাতাদের একটি করে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। সেটির মেয়াদ হবে এক বছর।