সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্র দেখার সুযোগ

সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্র দেখছে একটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা, ২৭ মার্চছবি: সাজিদ হোসেন

বন্দুক দিয়ে গুলি ছুড়ে শত্রুরূপী মানুষ আকৃতির বোর্ডে লাগাতে হবে। গুলি করে শত্রুকে ঘায়েলের এই সুযোগ পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে আসা অনেকেই নিজেদের দক্ষতা যাচাই করছিলেন। সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহৃত সমরাস্ত্র কাছ থেকে দেখতে এবং সেগুলো সম্পর্কে ধারণা পেতে দল বেঁধে লোকজন আসছেন প্রদর্শনীতে।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে চলছে সমরাস্ত্র প্রদর্শনী। সাত দিনের সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বিভিন্ন ধরনের সমরাস্ত্র জনসাধারণের প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। সবার জন্য উন্মুক্ত এই প্রদর্শনী চলবে ৩০ মার্চ পর্যন্ত। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলছে।

প্রদর্শনীর বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে আজ বুধবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। তাতে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রতিনিধিরা প্রদর্শনীতে নিজেদের বাহিনীর স্টল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। এবারের প্রদর্শনীতে মোট ৪৫ স্টলের মধ্যে সেনাবাহিনীর ৩৩টি, নৌবাহিনীর ৪টি, বিমানবাহিনীর ৪টি ও সশস্ত্র বাহিনীর ৪টি স্টল রয়েছে।

দর্শনার্থীদের বেশি ভিড় দেখা যায় প্যারা কমান্ডো ব্রিগেডের স্টলে। এখানে ‘জেল ব্লাস্টার গান’ বন্দুক দিয়ে গুলি ছোড়ার সুযোগ পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। প্যারা কমান্ডো সদস্যদের নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। খাবার নিয়ে বাছবিচারের সুযোগ থাকে না।

সমরাস্ত্র প্রদর্শনী নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে আজ বুধবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করা হয়
ছবি: সাজিদ হোসেন

উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ থেকে কয়েকজন বন্ধু এসেছিল প্রদর্শনী দেখতে। তাদের একজন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত বিন আমিন প্রথম আলোকে বলে, সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে জানার আগ্রহ আছে। এত কাছ থেকে যুদ্ধের বিভিন্ন অস্ত্র দেখার সুযোগ পেয়ে ভালো লাগছে। সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেওয়ারও ইচ্ছে আছে।

প্রদর্শনীতে আসা কিশোর-তরুণদের দীর্ঘ সারি দেখা যায় স্লাইডিং ও স্কাই রোপ নামের দুটি বিশেষ কারিকুরিতে। স্লাইডিং অংশে ২০ ফুট ওপর থেকে দড়িতে ঝুলে অনেকটা পথ যেতে হয়। আর স্কাই রোপে প্রায় ৫০ ফুট ওপরে দড়িতে একসঙ্গে কয়েকজন ঝুলতে পারে।

সাঁজোয়া স্টলে পাশাপাশি কয়েকটি সামরিক ট্যাংক, সাঁজোয়া যান। খানিক দূরেই শত্রুপক্ষের বিমান ও ট্যাংকবিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় কামান। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত এসব সরঞ্জামের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ ছবি তুলছেন। উৎসুক কেউ কেউ এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পাশে দাঁড়ানো সৈনিকদের প্রশ্ন করছেন। সৈনিকেরাও কৌতূহল মেটাচ্ছেন হাসিমুখে।

সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে আছে পানির নিচে ও ওপরে ব্যবহৃত নৌবাহিনীর বিভিন্ন সামগ্রী, টর্পেডো, নেভাল কামান ও মিসাইলের মডেল। ঢাকা, ২৭ মার্চ
ছবি: সাজিদ হোসেন

ফিল্ড আর্টিলারি স্টলে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর নতুন সংযোজন ‘টাইগার মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম’ প্রদর্শিত হচ্ছে। তুরস্কের এই যুদ্ধাস্ত্র ১২০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। পদাতিক ব্রিগেডের স্টলে সম্মুখসমরে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র সাজানো রয়েছে। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের স্টলে বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। মাটির নিচে স্থাপন করা হয়েছে কমান্ড পোস্ট

বিমানবাহিনীর নিজেদের নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু বেসিক ট্রেইনার (বিবিটি)’ ১ ও ২ দুটি বিমান প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে। নিজেদের কারিগরি প্রযুক্তি দিয়ে বানানো বাংলাদেশের প্রথম উড়োজাহাজ বিবিটি-১। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিবিটি-১ এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে বিবিটি-২ প্রথম ফ্লাই করে। বিবিটি-১–এর চেয়েও উন্নত, আধুনিক ও বড় পরিসরের বিবিটি-২।

বিমানবাহিনীর স্টলগুলোতে মিসাইল, লেজার গাইডেড বোমা, রকেট পডের মতো অস্ত্র দেখার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বা আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার রেপ্লিকা প্রদর্শিত আছে। বিমানবাহিনীর স্টলের বাইরে রাখা তিনটি বিমানের ককপিটে বসারও সুযোগ রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ ‘বানৌজা বঙ্গবন্ধু’র আদলে বানানো হয়েছে নৌবাহিনীর স্টল। সামনের কৃত্রিম লেকে মাথা তুলে আছে বাংলাদেশের সাবমেরিনের রেপ্লিকা। স্টলে আছে পানির নিচে ও ওপরে ব্যবহৃত নৌবাহিনীর বিভিন্ন সামগ্রী, টর্পেডো, নেভাল কামান ও মিসাইলের মডেল। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পেরও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে নৌবাহিনীর স্টলে।

বিমানবাহিনীর স্টলের বাইরে রাখা তিনটি বিমানের ককপিটে বসারও সুযোগ রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। ঢাকা, ২৭ মার্চ
ছবি: সাজিদ হোসেন

প্রদর্শনীর বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু হায়দার মোহাম্মদ রাসেলুজ্জামান বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস, দেশ ও জাতি গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রম, বাহিনীর আধুনিকায়ন, বাহিনীর ব্যবহৃত সমরাস্ত্র সম্পর্কে জনসাধারণকে ধারণা দেওয়া এবং এই পেশার প্রতি তরুণদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশে এ প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাসিবুল হাসান, নৌবাহিনীর কমান্ডার আবুল হাসনাত মোদাচ্ছের আহমেদ, বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার মো. এহতেশামুল হক ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের কমান্ডার আনোয়ার হোসেন স্টলগুলোর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।