অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে, তাতে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষের মধ্যে সন্তুষ্টি রয়েছে। একটি বড় অংশের মানুষ বলেছেন, তাঁরা সন্তুষ্ট নন, অসন্তুষ্টও নন। আরেকটি বড় অংশের মানুষের মধ্যে অসন্তুষ্টি রয়েছে।
প্রথম আলোর উদ্যোগে করা এক জরিপে মানুষের এই মতামত উঠে এসেছে। জরিপটি করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিমেকার্স কনসালটিং লিমিটেড।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তিন দিন পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের বয়স হয়েছে ১৫ মাসের কিছু বেশি। জরিপে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে, তাতে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
জবাবে সবচেয়ে বেশি, ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা কিছুটা সন্তুষ্ট। ৫ দশমিক ২ শতাংশের মত, তাঁরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। দুইয়ে মিলে সন্তুষ্টি থাকা মানুষের হার দাঁড়ায় সাড়ে ৫৪ শতাংশ। সন্তুষ্ট নন, অসন্তুষ্টও নন—এমন মানুষের হার কম নয়, ২৩ শতাংশ।
কিছুটা অসন্তুষ্ট মানুষের হার ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ। আর অত্যন্ত অসন্তুষ্ট মানুষ ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। দুইয়ে মিলে দেখা যাচ্ছে, অসন্তোষ থাকা মানুষের হার সাড়ে ২২ শতাংশ।
জরিপে আরও উঠে এসেছে, সরকার মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং ধর্মীয় শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো করেছে বলে মনে করেন সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ। অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা এবং দুর্নীতি দমনে সরকার সবচেয়ে ব্যর্থ বলে মনে করে জরিপে অংশ নেওয়া বেশিসংখ্যক মানুষ।
দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে মানুষের মতামত জানতে প্রথম আলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জরিপ করেছে। এবার প্রথম আলোর জন্য জরিপ করা কিমেকার্স কনসালটিং লিমিটেড গবেষণা ও পরামর্শদানে পেশাদার সংস্থা। জরিপের শিরোনাম ‘গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক–রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ–২০২৫’।
জরিপে অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা, সংস্কার, গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের আর্থিক অবস্থা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দেশের আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদ, ধর্মীয় শান্তি-সম্প্রীতি, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের প্রভাব; গণ-অভ্যুত্থান, আইনশৃঙ্খলা ও পরবর্তী নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা; ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন, ভোট দেওয়ার আগ্রহ, রাজনৈতিক দলের জয়ের সম্ভাবনা, নির্বাচনে গণ-অভ্যুত্থানের প্রভাব, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা কার, আগামী সরকারের কাছে প্রত্যাশা ইত্যাদি বিষয়ে মানুষের মতামত উঠে এসেছে।
জরিপে দেশের ৫টি নগর এবং ৫টি গ্রাম বা আধা শহর অঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৫৫ বছর) ১ হাজার ৩৪২ জন মানুষের মতামত নেওয়া হয়। এর মধ্যে পুরুষ ৬৭৪ জন, নারী ৬৬৮ জন। জরিপে অংশ নেওয়া মানুষেরা বিভিন্ন আয়, শ্রেণি ও পেশার। গত ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
জরিপকারী প্রতিষ্ঠান বলেছে, এটি একটি মতামত জরিপ। এটা দেশের প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ, তবে নির্দিষ্টভাবে কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে না। জরিপের নমুনা এমন মানুষদেরই তুলে ধরেছে, যাঁরা অনলাইন অথবা ছাপা পত্রিকা পড়তে পারেন এবং আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরিপের ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতার (কনফিডেন্স লেভেল) মাত্রা ৯৯ শতাংশ।
১১টি ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা
জরিপে ১১টি ক্ষেত্র উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, নিচের বিষয়গুলোয় অন্তর্বর্তী সরকার কতটা সফল বা ব্যর্থ বলে আপনি মনে করেন?
ছয়টি ক্ষেত্রে ৫০ বা তার বেশি শতাংশ মানুষ সরকারকে সফল বলে উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, ধর্মীয় শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখা, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ঘটা নির্যাতন-নিপীড়নের বিচার, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় লুটপাট ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিচার, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ও সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি করা এবং নারীর নিশ্চিন্তে চলাফেরা ও নিরাপত্তার পরিবেশ নিশ্চিত করা।
পাঁচটি ক্ষেত্রে সরকারকে ব্যর্থ বলে উল্লেখ করেছেন জরিপে অংশ নেওয়া ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ। সেগুলো হলো কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা, দুর্নীতি দমন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পাচার হওয়া টাকা বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।
অন্তর্বর্তী সরকার দেশে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় যেসব কাজ করেছে, তাতে আপনি কতটা সন্তুষ্ট—এমন একটি প্রশ্ন ছিল জরিপে। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫১ শতাংশের কিছু বেশি সন্তুষ্টির কথা বলেছেন। অসন্তুষ্টির কথা বলেছেন ১৫ শতাংশ। বাকিরা (৩৩ শতাংশ) সন্তুষ্ট-অসন্তুষ্ট কিছুই নন।