কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন, সরকারের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই তা ভালোভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। গত মাসে এই আন্দোলন ভিন্ন মাত্রায় রূপ নেয়। এ নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কারও কারও বক্তব্য শিক্ষার্থীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে।
পাশাপাশি কোটাপদ্ধতি পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানির ক্ষেত্রেও ধীর গতি দেখা গেল। যদিও আন্দোলন তীব্র রূপ নিলে তড়িঘড়ি করে আপিলের শুনানি এগিয়ে আনার আবেদন করা হলো। তখন কারফিউর দিন আপিল শুনানি হলো। আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কোটা সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করল।
আমার কাছে মনে হয়েছে এখানে সেই প্রাচীন প্রবাদ ‘সময়ে এক ফোঁড়, অসময়ে দশ ফোঁড়’ কথাটি ফলেছে। বিষয়টিকে প্রথমে হালকাভাবে দেখা হয়েছে, যা ঠিক হয়নি। শেষ পর্যন্ত সরকার এটি (কোটা সংশোধন) করল, কিন্তু তখন আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ল। একপর্যায়ে গুলিতে শিশু-কিশোর, ছাত্র, তরুণসহ অনেক মানুষের মৃত্যু হলো। তখন সব মিলিয়ে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটল। শুধু প্রাণহানিই নয়, সরকারি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিনষ্ট করা হয়েছে, যা দুঃখজনক। এটি কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। আবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১১ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিও অনাকাঙ্ক্ষিত।
একটি বিষয় বলা দরকার। বিগত তিনটি সাধারণ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ছিল না, বিতর্কিত ছিল, আদর্শ নির্বাচন ছিল না। এ নিয়ে মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি হয়। ফলে এখন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে দেশের পরিস্থিতি এখন ভালো নয়। এখনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। গতকালও অন্তত ৯৩ জনের প্রাণহানি হলো। এর মধ্যে ১৪ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। সব মৃত্যুই দুঃখজনক। সন্তোষজনক সমাধান না হলে এগুলো চলতেই থাকবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সব মৃত্যুর তদন্ত হওয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, মালের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি। দেশটাকে ভালো রাখতে হলে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। শুধু ছাত্রদের সঙ্গেই নয়, সব রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির সঙ্গে খোলা মনে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।
●আলী ইমাম মজুমদার সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব