আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী বাদ, ফিরলেন ৪৩ জন

  • বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের শাম্মী আহম্মেদ প্রার্থিতা ফিরে পাবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা শুক্রবার।

  • কিশোরগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন বিএনপির সাবেক নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান।

  • নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে গত পাঁচ দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ২৫৭ জন।

নির্বাচন কমিশন

মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাইয়ে ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সালামের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছিলেন সেখানকার রিটার্নিং কর্মকর্তা। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন একই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান। আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অনুষ্ঠিত শুনানিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে কমিশন। এর ফলে আবদুস সালামের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেল। ঋণখেলাপি হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

আবদুস সালামের বিরুদ্ধে ইসিতে আবেদনটি করেছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান। তিনি এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করলেও ইসির শুনানিতে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থিতা হারিয়েছেন। আবদুস সালাম ছাড়া অন্যজন হলেন যশোর-৪ আসনের এনামুল হক (বাবুল)। ঋণখেলাপি হওয়ায় এনামুলের প্রার্থিতা বাতিল করেছে কমিশন।

অন্যদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার যাচাই–বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের চারজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল। তাঁরা হলেন কক্সবাজার–১ আসনে সালাহ উদ্দীন আহমদ, কিশোরগঞ্জ–৩ আসনে মো. নাসিরুল ইসলাম খান, বরিশাল-৪ আসনে শাম্মী আহম্মেদ ও নোয়াখালী–৩ আসনে মো. মামুনুর রশীদ (কিরণ)। প্রার্থিতা ফিরে পেতে তাঁরা সবাই নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছিলেন। এর মধ্যে নাসিরুল ইসলাম খান ও মামুনুর রশীদ প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। বাকি দুজনের বিষয়ে কমিশন আগামীকাল শুক্রবার সিদ্ধান্ত দেবে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আজ পঞ্চম দিনে ১০১টি আপিল আবেদনের শুনানি হয়। তাতে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৪৩ জন। প্রার্থিতা হারিয়েছেন একজন (আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সালাম)। আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে ৫২টি। যেখানে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি প্রার্থিতা বাতিল চেয়েও আবেদন ছিল। আর চারজনের প্রার্থিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কমিশন। শুনানিতে অনুপস্থিত ছিলেন একজন।

যাচাই–বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা সিদ্ধান্তের (মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও বাতিল) বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানি আগামীকাল শেষ হবে। শুনানিতে যে আবেদনগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কমিশন, সেসবও আগামীকাল নিষ্পত্তি হওয়ার কথা রয়েছে।

পাঁচ দিনের শুনানিতে এখন পর্যন্ত প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ২৫৭ জন। আর প্রার্থিতা হারিয়েছেন তিনজন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী ছাড়াও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী (সুনামগঞ্জ–৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান শামছুল আবেদীন) রয়েছেন।

আজ শুনানিতে বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদের দুটি আপিল আবেদন ছিল। এর একটি তাঁর নিজের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া, যা দ্বৈত নাগরিকত্ব (অস্ট্রেলিয়া) থাকার দায়ে বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। অপর আবেদনটি আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথের মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে করা। এই আবেদনে পংকজ নাথের বিরুদ্ধে হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলেছেন শাম্মী। তাঁর দুটি আবেদনের ওপর আগামীকাল সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।

ঋণখেলাপিরা বাদ পড়ছেন

ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে যেসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তারা বাতিল করেছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগ আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পাচ্ছেন না। ঋণখেলাপি হওয়ায় আজ খুলনা-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীরের আপিল নামঞ্জুর হয়। এর আগে গত বুধবার গাজীপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদের আপিল নামঞ্জুর হয়েছিল। ঋণখেলাপি হওয়ায় তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। আপিল করেও তিনি প্রার্থিতা ফিরে পাননি। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি।

প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া

কিশোরগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। বিএনপির সাবেক এই নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে করছেন। মামলার তথ্য গোপন ও ঋণখেলাপি—এমন অভিযোগে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমানের প্রার্থিতা বহাল রেখেছে নির্বাচন কমিশন। দ্বৈত নাগরিকত্ব (যুক্তরাজ্য) রয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিতে আবেদন করেছিলেন একই আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।

নোয়াখালী-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ একরামুল করিম এবং পটুয়াখালী-১ আসনে জাতীয় পার্টির রুহুল আমীন হাওলাদারের প্রার্থিতা বাতিলের জন্য করা আপিল আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে। ফলে তাঁদের প্রার্থিতা বহাল রয়েছে।

কমিশনের সামনে মারামারি

নির্বাচন কমিশনের সামনে আজ দুপুরে কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ও তিতাস) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবদুস সবুরের কর্মী–সমর্থকদের সঙ্গে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নাঈম হাসানের সমর্থকদের মারামারি হয়।

১ শতাংশ সমর্থনসূচক সইয়ের তালিকায় গরমিল থাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী নাঈম হাসানের প্রার্থিতা বাতিল করেছিলেন। আজ শুনানির পর নির্বাচন কমিশন রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসির সিদ্ধান্তের পর নাঈম ও তাঁর লোকজন নির্বাচন ভবন থেকে বের হওয়ার সময় তাঁদের কটূক্তি করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সবুরের সমর্থকেরা। তখন সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় নাঈমের দুই সমর্থককে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।

নাঈম হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসির শুনানিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের থাকার কথা ছিল না। আমরা বের হয়ে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকেরা কটূক্তি করে। তারা আক্রমণ করলে আমার সমর্থকেরা আত্মরক্ষা করে।’

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের আবদুস সবুরের অনুসারী কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘তারা আগে মারতে আসে।’
আবদুস সবুরের পক্ষে–বিপক্ষে ইসিতে কোনো শুনানি না থাকার পরও কেন এসেছিলেন—এমন প্রশ্নে সারোয়ার বলেন, ‘জানার জন্য তো আসতে পারি।’

নির্বাচন ভবনের সামনে দুই পক্ষের মারামারির বিষয়ে শের-ই-বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, দুই প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা হয়েছিল। তাঁদেরকে সেখানে পুলিশ সরিয়ে দিয়েছিল। এর বেশি কিছু হয়নি।