দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশি–বিদেশি সবার আগ্রহ রয়েছে। বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। তবে এই নির্বাচন নিয়ে আমাদের ওপর দেশি-বিদেশি কোনো চাপ নেই। চাপ আছে আমাদের বিবেকের। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন অঙ্গীকারবদ্ধ।
বিএনপিসহ তাদের সমমনা কিছু দল নির্বাচন বর্জন করেছে। সব দল নির্বাচনে অংশ নিলে আরও ভালো হতো। আমরা শুরু থেকে সেটাই চেয়ে এসেছি। বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক–অনানুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য একাধিকবার আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি, যা আমাদের ব্যথিত করেছে। তাদের যে দাবি, তা কেবল রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা সম্ভব। এখানে নির্বাচন কমিশনের কিছু করণীয় নেই।
যেহেতু এবার কিছু দল নির্বাচন বর্জন করেছে, তাই ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি অবশ্যই কিছুটা চ্যালেঞ্জের। ভোটারদের উপস্থিত করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয়। আমাদের দায়িত্ব সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে, নির্দ্বিধায় ও নিরাপত্তার সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারেন এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে, নিজের পছন্দে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারেন। সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই কমিশন নিয়েছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর রাখা হয়েছে। ভোট দেওয়ার যেমন অধিকার আছে, তেমনি না দেওয়ারও অধিকার আছে। কিন্তু কাউকে ভোট প্রদানে বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইনের দৃষ্টিতে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি যা–ই হোক নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে; অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। যদি কোনো কেন্দ্রে জাল ভোট পড়ে বা অনিয়ম হয়, তাহলে সে কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে। জাল ভোট যেখানে পড়বে, সে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং যাঁরা কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোথাও কারচুপি কিংবা ভোটারদের বাধা দিলে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে। নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে যাঁরাই দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের কারও কোনো অনিয়মে ছাড় দেওয়া হবে না।
যদি প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মনে করেন কোনো সন্ত্রাসী ও পক্ষপাতমূলক কর্মকাণ্ড আছে, তখন পুলিশকে ডেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন। যদি কোনো কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তাহলে কেন্দ্র বন্ধ করে চলে যাবেন। কিন্তু কোনো প্রকার ছাড় নয়। ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন জিরো টলারেন্স নীতি প্রদর্শন করবে।
নির্বাচনের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন কমিশন নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন পুলিশ ও প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করেছে, যা এর আগে কখনো সেভাবে দেখা যায়নি। যেখানে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে এবং অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেখানে পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও কমিশন কঠোর ছিল। একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে, আগে এমন নজির নেই। এ ছাড়া অনেক প্রার্থী ও তাদের কর্মী–সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা, জেল–জরিমানা করা হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জায়গায় সহিংসতা হয়েছে, সেখানেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, আগামীকাল (৭ জানুয়ারি) ভোটাররা নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। ভোটারদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, সবাই ভোটকেন্দ্রে আসুন, নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন। ভোট আপনার অধিকার এবং পবিত্র আমানত। আমরা আশা করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামীকাল একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।