২০০তম মঞ্চায়ন হতে যাচ্ছে ‘রাঢ়াঙ’ নাটকের
নয়াহাটার সাঁওতাল বিদ্রোহের সেই কাহিনি বাংলার মানুষ কখনই ভুলবে না। এই নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়কে মানুষের হৃদয়ে গেঁথে দিয়েছেন নাট্যকার মামুনুর রশীদ। রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন ‘রাঢ়াঙ’–এর মতো নাটক। ২০০৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রথম মঞ্চায়ন হয় আরণ্যক নাট্যদলের এই নাটকটি। শুক্রবার ঢাকার মঞ্চে হতে যাচ্ছে নাটকটির ২০০তম প্রদর্শনী
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছিল ‘রাঢ়াঙ’–এর ১৯৯তম মঞ্চায়ন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তন মঞ্চে নাটকটিতে অভিনয় করেন আরণ্যকের প্রথিতযশা সব অভিনয়শিল্পীরা। এই মাইলফলক স্পর্শ করায় এর দর্শকদের অভিবাদন জানালেন নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ।
‘রাঢ়াঙ’ আরণ্যকের ৪০তম প্রযোজনা। সাঁওতালি শব্দ রাঢ়াঙ মানে দূরাগত মাদলের ধ্বনিতে জেগে ওঠার আহ্বান। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সাঁওতালরা। ১৯৪৯ সালে নাচোলের বিদ্রোহে পরাজিত হওয়ার পর থেকে তাঁদের ওপর চলতে থাকে নানা অত্যাচার। বারবার তাঁদের অভিবাসনের কাহিনি নিয়েই ‘রাঢ়াঙ’ নাটকের গল্প।
একসময় নাচোল থেকে নওগাঁর ভীমপুরে চলে আসেন সাঁওতালরা। স্বপ্ন ছিল নিজেদের ঘর হবে, জমি হবে। কিন্তু তা আর হয় না। ২০০০ সালে এসে আলফ্রেড সরেনের নেতৃত্বে ভূমির অধিকার নিয়ে আবারও জেগে ওঠেন সাঁওতালরা। কিন্তু সরেনকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সাঁওতালদের কাছে প্রতিজ্ঞা করে মামুনুর রশীদ বলেছিলেন, এই নৃগোষ্ঠীর প্রাণের আকাঙ্ক্ষা তিনি তুলে আনবেন তাঁর কলমে। সেই থেকে হলো শুরু।
নাটকটি দেখার আহ্বান জানিয়ে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আরণ্যক নাট্যদলে আমার ২৫ বছর পার হয়ে গেছে। সেই “কালো দৈত্য” দিয়ে শুরু। এরপর “ওরা কদম আলী”, “ইবলিশ”, “প্রাকৃতজনকথা”, “জয়জয়ন্তী”, “ময়ূর সিংহাসন”, “সংক্রান্তি”, “চে’র সাইকেল”, “ঘুমের মানুষ”, “ঋণের সঙ”, “শত্রুগণ”, “ঐ আসে”। বিগত ২৫ বছরে কখনো মঞ্চের পেছনে, কখনো অভিনয়ের জন্য মঞ্চে দাঁড়ানো। এই নাট্যদল থেকেই নাট্যগুরু মামুনুর রশীদের কাছে অভিনয়ে হাতে খড়ি। এরপর আরণ্যকের মূলমন্ত্র—“নাটক শুধু বিনোদন নয়, শ্রেণিসংগ্রামের সুতীক্ষ্ণ হাতিয়ার” স্লোগানটি বুকে নিয়েই অভিনয়ের পথচলা। অনেকগুলো নাটকের শততম প্রদর্শনীতে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছে আমার। প্রায় দুই বছর পর আবার মঞ্চে দাঁড়াব “রাঢ়াঙ” নাটকে অভিনয়ের জন্য। আরণ্যক থেকে অভিনয়ের যাত্রা শুরু করেছি এবং যেখানে এসে পৌঁছেছি, সেটাও আরণ্যকের কারণেই। আরণ্যকের পাদপ্রদীপে আমার ঠাঁই হয়েছিল বলেই আজ এত মানুষের ভালোবাসায় ঋদ্ধ হয়েছি।’
বিশেষ দুটি প্রদর্শনীতে চঞ্চল চৌধুরী, আ খ ম হাসান ছাড়াও পাওয়া যাবে টেলিভিশন নাটকের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় মুখ, দলটির শুরুর দিকের অভিনয়শিল্পীদের। আরও রয়েছে সুজাত শিমুল, অপু মেহেদী, নিকিতা নন্দিনী, শামীমা শওকত, রুবলী চৌধুরী, সাজ্জাদ সাজু, ঊর্মি হোসেন, কামরুল হাসান, বাপ্পাদিত্য চৌধুরী, দিলু মজুমদার, সাঈদ সুমন, পার্থ চ্যাটার্জি প্রমুখ।
শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় নাট্যশালার সেমিনারকক্ষে রয়েছে সেমিনার। সেখানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন মেসবাহ কামাল। বিকেল চারটায় পরীক্ষণ থিয়েটারের লবিতে আরণ্যকের সাবেক সদস্যদের সম্মিলনী। ২০০তম মঞ্চায়নকে উৎসবমুখর করে তোলার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে দলটি।