ইতালিয়ান-থাইয়ের শেয়ার হস্তান্তরের স্থিতাবস্থা বাড়ল

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

ঢাকা দ্রুতগতির উড়ালসড়কের (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণকাজের অংশীদার ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার হস্তান্তরের ওপর স্থিতাবস্থা চলমান রেখেছেন আপিল বিভাগ। সিঙ্গাপুরে আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে ইতালিয়ান-থাইয়ের করা আবেদনের (সালিসি মামলা) ওপর প্রথম সেশন (বৈঠক) বসা পর্যন্ত স্থিতাবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

একই সঙ্গে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে কোম্পানিটির করা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানি ২৯ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার স্থানান্তরে ওপর স্থিতাবস্থা তুলে দিয়ে ১২ মে রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায় স্থগিত চেয়ে কোম্পানিটির পক্ষে আবেদন করা হয়, যা চেম্বার আদালত হয়ে ১৬ মে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আদালত শেয়ার হস্তান্তরের ওপর ৩০ মে পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন। এই সময়ের মধ্যে ইতালিয়ান-থাইকে লিভ টু আপিল করতে বলা হয়। কোম্পানিটি লিভ টু আপিল করে। আগের ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ এবং আইনজীবী ইমতিয়াজ ফারুক। সিনোহাইড্রো করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী এবং ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান চায়না এক্সিম ব্যাংকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান শুনানিতে ছিলেন।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) বড় এই প্রকল্পে বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ডের একটি ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ এবং নির্মাণকাজের মাধ্যমে অংশীদার। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো থাইল্যান্ডভিত্তিক ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড, চীনের শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড।

ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির আইনজীবী ইমতিয়াজ ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, তিনটি প্রতিষ্ঠান ওই নির্মাণকাজের অংশীদার। তাদের মধ্যে শেয়ারসংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে ইতালিয়ান-থাই হাইকোর্টে সালিসি মামলা করে। চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে শেয়ার হন্তান্তরে স্থিতাবস্থা তুলে দিয়ে ইতালিয়ান থাইয়ের আবেদন খারিজ করে ১২ মে হাইকোর্ট ওই রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে ইতালিয়ান থাই লিভ টু আপিলটি করে।

ইমতিয়াজ ফারুক বলেন, এর আগে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারে আরবিট্রেশন (সালিসি) মামলা করে ইতালিয়ান থাই। নির্মাণকাজের অংশীদার অন্য দুটি কোম্পানির কাছে ইতালিয়ান থাইয়ের শেয়ার হস্তান্তর দাবি এবং ঋণদাতা ব্যাংককের গ্যারান্টির টাকা দাবির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলাটি করা হয়। সেন্টার নিযুক্ত আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালের প্রথম বৈঠক বসা পর্যন্ত ইতালিয়ান থাইয়ের শেয়ার হস্তান্তরের ওপর স্থিতাবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ফলে এই সময়ে শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে না। তবে নির্মাণকাজ চলতে কোনো বাধা নেই।

অবশ্য ব্যাংকের আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, সিকিউরিটি চুক্তির শর্ত অনুসারে ইতালিয়ান-থাইয়ের শেয়ার অপর দুই কোম্পানির কাছে হস্তান্তর না হওয়ায় পর্যন্ত ব্যাংকঋণের অর্থ ছাড় করবে না।

এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড নামের কোম্পানি গঠন করে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট। কোম্পানির অংশীদার তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার যথাক্রমে ৫১, ৩৪ ও ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ হলো এক্সপ্রেসওয়ের নির্বাহক প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। চুক্তি অনুসারে, মূল কাঠামো নির্মাণ ব্যয়ের ৭৩ শতাংশ জোগান দেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। আর ২৭ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার, যা ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং (ভিজিএফ) নামে পরিচিত।