এসি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ আপনার হাতেই
বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। ফলে বাড়ছে এসির ব্যবহারও। এসির ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলছে এর কারণে নানা ধরনের দুর্ঘটনা। আমাদের দেশে এসি দুর্ঘটনার প্রধান কারণ এই যন্ত্রটির রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা করা। অন্য যেকোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রের মতো এসিরও যে বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না। তাই প্রায় সময়ই শোনা যায়, ঘরবাড়ি বা অফিসে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।
এসি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। কী কী পদক্ষেপে এসির দুর্ঘটনা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়, তা নিয়ে বলেছেন যমুনা ইলেকট্রনিকসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ব্র্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) রুহুল কে সাগর। তিনি বলেন, ‘এসি ভালো রাখতে নিয়মিত ফিল্টার, কয়েল ও সংযোগ লাইন পরিষ্কার করা জরুরি। সেই সঙ্গে কম্প্রেসরের কার্যক্ষমতা ও বিদ্যুতের সংযোগ যাচাই করে নিতে হবে। তাহলে একদিকে যন্ত্রটি যেমন ভালো থাকবে, তেমনি দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এসি আর বিপজ্জনক মনে হবে না।’
জীবন-যাপনের নিত্যপ্রয়োজনীয় অনুষঙ্গটির নানাবিধ দুর্ঘটনা ঠেকাতে কী কী করতে হবে, সে বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন রুহুল কে সাগর।
নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে এসি কিনতে হবে। অনেক সময় পুরোনো বা নিম্নমানের এসি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি করা হয়। ভালো ব্র্যান্ডের এসি না হলে কম্প্রেসরসহ অন্যান্য যন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করে না। এ ধরনের এসির ব্যবহার দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই নিম্নমানের বা নকল ব্র্যান্ডের এসি ও কম্প্রেসার কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এসি কেনার আগেই ঘরের আকার অনুযায়ী সঠিক ক্ষমতার এসি নির্ধারণ করতে হবে। আমরা অনেক সময়ই ঘরের আকৃতি অনুযায়ী এসি কিনি না। ফলে ব্যবহৃত এসির ওপর চাপ পড়ে, যা দুর্ঘটনার কারণ হয়।
এসি স্থাপন ও সংযোগ দেওয়ার সময়ে অনেক ধরনের ভুল হয়। এ ছাড়া অতিরিক্ত তাপ, ময়লা ও দূষণ, পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট এবং আশপাশে দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি ইত্যাদি কারণে এসি দুর্ঘটনা ঘটে।
এসি স্থাপনের সময় সঠিকভাবে সংযোগ দেওয়া না গেলে কিংবা পাইপের কোথাও ছিদ্র হলে তাতে কম্প্রেসেরার ওপর চাপ বাড়ে। এতে ঘর যেমন প্রয়োজন অনুসারে ঠান্ডা হয় না, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে।
বৈদ্যুতিক তারের শর্টসার্কিটের কারণেও এসি দুর্ঘটনা ঘটে। বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ ঠিকভাবে না লাগানো হলে এসি অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় এবং আগুন ধরে যেতে পারে। তাই স্থাপনের আগে বৈদ্যুতিক সংযোগ এসির জন্য উপযোগী কি না, সেটি পরীক্ষা করে নিতে হবে।
এসির আউটডোর মেশিন অনেক সময় বদ্ধ স্থানে বসানো হয়, যেখানে সঠিকভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে না। তাই এসির আউটডোর এমন স্থানে বসাতে হবে যেন পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।
এসি ও উইন্ডো ফ্রেমের মধ্যকার সিলটি খেয়ালে রাখতে হবে, যেন প্রতিটি কুলিং সেশনের শুরুতে এটি ইউনিটের মেটাল কেসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এ কাজগুলো কোনো দক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে করানোই ভালো।
এসির ইভাপোরেটর ও কনডেনসার কয়েল প্রতি বছর পরীক্ষা করা উচিত। সেই সঙ্গে পরিষ্কারও করা দরকার। এসির কনডেনসারে ময়লা থাকলে কম্প্রেসারে উচ্চ তাপমাত্রা ও উচ্চচাপ তৈরি হয়। এ ছাড়া কম্প্রেসারে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট চার্জ করলে উচ্চচাপ তৈরি হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
মাঝে মধ্যে কোনো শক্ত তার দিয়ে এসির ড্রেন চ্যানেল পরিষ্কার করতে হবে। এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ হলে এসির ভেতরে উচ্চচাপ তৈরি হয়ে কম্প্রেসার ব্রাস্ট হতে পারে।
প্রচন্ড গরমে অনেকেই এসি চালিয়ে বন্ধ করতে ভুলে যান। বাড়তি তাপমাত্রায় এসির কার্যক্ষমতা না বুঝে দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা ঠিক নয়। একনাগাড়ে আট ঘণ্টার বেশি এসি না চালিয়ে মাঝে মাঝে বিরতি দিতে হবে। তাহলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যাবে।