ইতিহাস বিকৃতি রোধে প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য অবিকৃত অবস্থায় তুলে ধরা: প্রধান বিচারপতি

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে রোববার বিকেলে দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানছবি: সংগৃহীত

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস জাতীয় জীবনে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে, তার সবচেয়ে বড় শিকার আমাদের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে যাদের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের পর। তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এই বিকৃতি প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য অবিকৃত অবস্থায় জনগণের সামনে তুলে ধরা।’

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে রোববার বিকেলে দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। ইতিহাসের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন রচিত ও সম্পাদিত বই দুটি হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন’ ও ‘মিডিয়া অ্যান্ড দ্য লিবারেশন ওয়ার অব বাংলাদেশ’।

লিখিত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ–সংক্রান্ত সঠিক তথ্যের অন্যতম আঁধার মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে দেশি–বিদেশি প্রকাশিত পত্রিকার খবরগুলো। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা বিশ্ববিবেককে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল। ফলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ–সংক্রান্ত খবর অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ হতো। সে সময় পত্রিকায় যে খবরগুলো ছাপা হতো, তা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার নির্ভরযোগ্য দলিল। তাই মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস শনাক্ত করতে ১৯৭১ সালে প্রকাশিত খবরগুলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায়।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আরও বলেন, ‘স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশকে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন করা সত্ত্বেও স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারিনি। এটা সত্য যে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের হার অত্যাসন্ন জেনে মুক্তিযুদ্ধের অনেক দলিলপত্র ধ্বংস করেছে।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু দ্রুততম সময়ে বিশ্বের অন্যতম যে আধুনিক সংবিধানটি উপহার দিয়েছিলেন, সেখানেও জনগণকে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার উৎস হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে। তাই আমাদের রাজনীতিবিদদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির এই মৌলিক দর্শন, তথা রাজনীতিতে জনগণ কল্যাণবোধের প্রাধান্যকে আপনাদের রাজনৈতিক জীবনের উপজীব্য হিসেবে গ্রহণ করুন।’

বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী, ১৯৭১: গণহত্যা–নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর, বাংলাদেশ চর্চা ও প্রকাশনা সংস্থা অনন্যা ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান ও বইয়ের লেখক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বক্তব্য দেন। গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি সম্পাদক চৌধুরী শহীদ কাদেরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুর্শিদা বিনতে রহমান ও অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক।