৫১ শতাংশ ফাঁদে পড়ে ভাগ্য ফেরাতে গিয়ে

মানব পাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে যেসব মানুষ পাচারের শিকার হন, তাঁদের ৫১ শতাংশই পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ে ভাগ্য ফেরাতে গিয়ে বা অর্থনৈতিক কারণে। এ দেশকে মানব পাচারের একটি উৎসদেশ ও রুট বলে গণ্য করা হয়।

মানব পাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপনায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ইউনাইটেড নেশনস নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশন যৌথভাবে ‘মানব পাচার প্রতিরোধে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অপব্যবহার’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু হেনা মোস্তফা জামান উপস্থাপনাটি তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, সেসব ব্যক্তিকে পাচারের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়, যাঁরা আসলে নানা সমস্যায় থাকেন। অর্থনৈতিক সমস্যা ছাড়াও ভুক্তভোগীদের ঝুঁকির নানা ধরন রয়েছে।

উপস্থাপনায় আরও উঠে আসে, পাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ৯ শতাংশ শিশুকালে পিতা-মাতার স্নেহ থেকে বঞ্চিত। ৬ শতাংশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সীমিত ও তারা বিদেশি ভাষা জানে না। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা রয়েছে ৩ শতাংশের। এই হিসাব তৈরি করা হয়েছে মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে।

বাংলাদেশ থেকে কোন কোন দেশে মানব পাচার বেশি হয়, তা–ও তুলে ধরা হয় জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিবের উপস্থাপনায়। এতে বলা হয়, ভারত, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, থাইল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল, সাইপ্রাস, স্পেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, ইরাক ও লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের বেশি পাচার করা হয়।

উপস্থাপনায় মানব পাচারের ঝুঁকির কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়—ভারতের সঙ্গে ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটারের দীর্ঘ সীমান্ত, অবৈধ পথে বিদেশে যেতে প্ররোচনা, সচেতনতার অভাব ও বাল্যবিবাহের উচ্চহার।

২০২১ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানব পাচারসংক্রান্ত ৫৩৮টি মামলা তদন্ত করেছে বলেও উল্লেখ করা হয় উপস্থাপনাটিতে। এতে জানানো হয়, ৪৪৯টি মামলা ছিল আগের বছরগুলোয়। ২০২১ সালে মানব পাচার আইনের অধীনে করা মাত্র একটি মামলার রায় হয়েছে। আর চলতি বছরে রায় হয়েছে ১১টি মামলার।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মানব পাচার ঠেকাতে সচেতনতা বাড়ানো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ পদক্ষেপ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে পাচারকারীদের শনাক্ত ও অভিযান পরিচালনার ওপর জোর দেন।

ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকশন বলেন, করোনা মহামারির কারণে মানব পাচার বেড়ে গেছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পাচার অন্যতম সমস্যা।

মানব পাচারকারীরা ফাঁদ পাততে ফেসবুক, টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছেন বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মিশনপ্রধান আবদুস সাত্তার ইসোভ। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদেরও পাচার প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।’

‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন চায় বাংলাদেশ’

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান রোহিঙ্গাদের নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশকে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাঁরা এরই মধ্যে মানব পাচার, মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন।

অনুষ্ঠানে জননিরাপত্তা বিভাগের জে্যষ্ঠ সচিব মো. আখতার হোসেন, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি চিফ অব মিশন স্কট ব্র্যানডন প্রমুখ বক্তব্য দেন।