ছাত্রলীগ নেতাসহ জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিক্ষোভ

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ তারেক হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন। গতকাল বিকেলেছবি-সংগৃহীত

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ তারেক (২৮) হত্যাকাণ্ডের ছয় দিন অতিক্রান্ত হলেও পুলিশ মামলার অন্যতম আসামি ফারুক আজিজ, মো. শরীফসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ফারুক আজিজ উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি এবং মো. শরীফ সাধারণ সম্পাদক।

এ দিকে ব্যবসায়ী তারেক হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন করছেন এলাকার ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। এসব কর্মসূচিতে বক্তারা তারেক হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, আসামিরা সরকারি দলের লোক হওয়ায় পুলিশ তাঁদের ধরছে না।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলেছে, আসামিরা ঘটনার পর এলাকা থেকে আত্মগোপন করেন, এ কারণে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। তারপরও কিছু মানুষ আন্দোলন কর্মসূচির নামে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছে।

গত ৪ জুন রাতে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ তারেক ধুরুং বাজারে নিজের দোকান বন্ধ করে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন। পরের দিন ৫ জুন সকালে উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের মগলাল পাড়ার রাস্তার ওপর তারেকের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠায়।

তারেক হত্যার বিচারের দাবিতে কুতুবদিয়ায় বিক্ষোভ
ছবি সংগৃহীত

নিহত তারেক দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মুছা সিকদার পাড়ার মৃত আবু তাহেরের ছেলে। ধুরুং বাজারের একটি দোকানে তিনি এলপিজি গ্যাসের (সিলিন্ডার) ব্যবসা করেন। ঘটনার ৩ দিন পর অর্থাৎ ৭ মে নিহতের ছোট ভাই ও সিএনজিচালক মোহাম্মদ জিহান বাদী হয়ে কুতুবদিয়া থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

আসামিরা হলেন, উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কুইল্যারপাড়ার কলিম উল্লাহ ছেলে তরিক উল্লাহ, একই গ্রামের নুর আলমের ছেলে মইন্যা, মগলাল পাড়ার তাবারুল্লাহর ছেলে এহছান, কলিম উল্লাহর ছেলে শরীফ উল্লাহ, হাফেজ আহমদের ছেলে এমরান, আবু সৈয়দের ছেলে শিফাত, দলুর ছেলে মামুন, হাফেজ আহমদের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম, নুর ইসলামের ছেলে ফারুক আজিজ ও নাছির আহমদের ছেলে মাহবুব।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ৪ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে দোকান থেকে ব্যবসায়ী তারেককে ডেকে নিয়ে যান আসামি তরিক উল্লাহ, মইন্ন্যা, শরীফ উল্লাহসহ অনেকে। গভীর রাতে বাড়ি না ফেরায় তারিককে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করা হয়। তখন মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পরের দিন সকালে পুলিশ আয়ূব আলী কোম্পানির বাড়ির সামনে ইটের রাস্তার ওপর থেকে তারেকের মরদেহ উদ্ধার করে। তাঁর সঙ্গে আসামিদের ব্যবসাসংক্রান্ত বিরোধ ছিল বলে পুলিশ ধারণা করছে। এ জন্যই তাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।

মামলার বাদী মোহাম্মদ জিহান (২৩) প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসার টাকা লুট করতেই তাঁকে হত্যা করা হয়। আসামিদের মধ্যে ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও আছেন। পুলিশ বলছে, তাঁরা কেউ এলাকায় নেই, তাই গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।

নিহত তারেকের স্ত্রী সে‌লিনা আক্তার বলেন, তারেককে দোকান থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার ছয় দিনেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় আতঙ্কে আছেন তিনি। সংসারে তাঁর তিন বছর বয়সী একটি ছে‌লে রয়েছে।

সে‌লিনা আক্তার বলেন, ঘটনার আধঘণ্টা আগে রাত ৯টায় তারেকের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ কথা হয় মুঠোফোনে। তখন তিনি তারেককে ঘ‌রে রান্নার জন্য কিছু তরকারি নি‌য়ে যেতে বলেন। এরপর তাঁকে কল দিলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম কবির প্রথম আলোকে বলেন, তারেক হত্যা মামলার ৮ নম্বর আসামি তৌহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামিরা দ্বীপ ছেড়ে আত্মগোপন করায় গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। আন্দোলন-প্রতিবাদ সভা করছেন। ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত ছিল, তা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক মামলার আসামি হলেও তদন্ত নিজস্ব গতিতে চলবে। ঘটনার পর ছাত্রলীগ নেতারা দ্বীপ ছেড়েছেন বলে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। তারপরও পুলিশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

ব্যবসায়ী মোহাম্মদ তারেক
ছবি সংগৃহীত

আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোচ্চার মানুষ

ধুরুং বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজবাহুল আলম সিকদার বলেন, তারেককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ধুরুং বাজারের সিসিটিভি ফুটেজ দেখা যায়, তারেক রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে দোকান বন্ধ করে বাজারের পূর্ব দিকে চলে গেছেন। পরের দিন সকালে তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় মানুষ ক্ষুব্ধ। বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ মাঠে নেমে আন্দোলন করছেন।

তারেক হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল সোমবার আধা বেলা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে ধুরুং বাজারের ব্যবসায়ীরা। সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত কয়েক শ দোকান বন্ধ রাখা হয়। এ সময় ব্যবসায়ীরা প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও চৌরাস্তার মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। তাতে বক্তব্য দেন, দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ধুরুং বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলাউদ্দিন আল আজাদ, বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজবাউল আলম সিকদার, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোছাইন, মোহাম্মদ রিয়াদ প্রমুখ।

আগের দিন বিকেলে ধুরুং বাজার চৌরাস্তার মোড়ে মানববন্ধন করেন ধুরুং বাজারের ব্যবসায়ীরা। তাতে বক্তব্য দেন ধুরুং আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মুর্শেদুল আলম চৌধুরী, ধুরুং বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজবাহউল আলম সিকদার, চিকিৎসক আবুল কালাম ও রাশেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোছাইন প্রমুখ।