বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়লেও এলএনজি আমদানি কঠিন হবে: আইইইএফএ

এলএনজিপ্রতীকী ছবি

দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানোর দিকে গেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে দিনে ১১০ কোটি এলএনজি সরবরাহের সক্ষমতা আছে দেশে। নতুন করে আরও টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি সরবরাহে চুক্তি করা হচ্ছে। তবে সক্ষমতা বাড়লেও আর্থিক পরিস্থিতির কারণে এলএনজি আমদানি বাড়ানো কঠিন হবে।

এলএনজির বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক গবেষণাপত্রের বাংলাদেশ অধ্যায়ে এসব কথা বলা হয়েছে। এ প্রতিবেদন আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনলাইনে প্রকাশ করেছে ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ)। আইইইএফএ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে এলএনজি আমদানি কমেছিল ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে খোলাবাজারে এলএনজির দাম কমায় গত বছর এলএনজি আমদানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ এলএনজি টার্মিনালের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, যদিও দেশের আর্থিক পরিস্থিতির কারণে এলএনজি আমদানি বাড়ানো কঠিন হবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার কমাতে পারে।

প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ বছরে টাকার অবনমন হয়েছে ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ। জ্বালানি বিল পরিশোধে বাংলাদেশকে সম্প্রতি হিমশিম খেতে দেখা গেছে।

গবেষণাপত্রের বাংলাদেশ অধ্যায়ের লেখক এবং বাংলাদেশের জ্বালানি খাতবিষয়ক আইইইএফএর প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম আজ প্রথম আলোকে বলেন, এলএনজির বাজার অস্থির, দাম একই রকম থাকে না। অবশ্য চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি থাকায় বৈশ্বিকভাবে দাম নাগালের মধ্যেই থাকবে। তবে বাংলাদেশের জন্য সেই দাম দিয়ে কেনাও কঠিন হবে। এতে এলএনজির সক্ষমতা অলস পড়ে থাকতে পারে। আমদানিনির্ভর জ্বালানি নীতি দেশের জন্য ভালো হবে না।

বিকল্প করণীয় হিসেবে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, গ্যাসভিত্তিক শুধু বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র না করে সান্ধ্যকালীন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় চালানোর জন্য ছোট আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা যেতে পারে। জ্বালানি তেলের পরিবর্তে এসব কেন্দ্র চালানো যাবে। এতে দিনের বেলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের সুযোগ বাড়বে। একই সঙ্গে জ্বালানি দক্ষতা বাড়িয়ে এলএনজির চাহিদা কমানো যেতে পারে।

জ্বালানি রূপান্তরের কারণে ২০২১ সালেই ইউরোপে গ্যাস ব্যবহার কমেছে ২০ শতাংশ। তারা পারমাণবিক ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়েছে। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এলএনজির সরবরাহ সংকট তৈরি হয়। এতে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছে অনেক দেশ। আগামী দুই বছরের মধ্যে বিশ্বে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত এলএনজির সরবরাহ হতে পারে বাজারে। বর্তমানে সারা বিশ্বে এলএনজির মোট যে চাহিদা, তার অর্ধেকই জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোতে। এসব দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে এলএনজির চাহিদা কমে যাবে। অন্যদিকে এশিয়ায় এলএনজির চাহিদা বাড়বে, কিন্তু এই চাহিদা পূরণে দেশগুলো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নানা সমস্যার মুখোমুখি হবে।

আইইইএফএ বলছে, গ্যাস–সংকটের কারণে এলএনজির চাহিদা অনেক বেড়ে যাওয়ায় দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। নতুন করে বিভিন্ন দেশ থেকে বাড়তি চাহিদা তৈরি হতে থাকে। এতে সরবরাহ সক্ষমতা বাড়ানোয় হাত দিয়েছে এলএনজি রপ্তানিকারক দেশগুলো। তাই চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেড়ে যেতে পারে সামনে। বছরে ১৯ কোটি ৩০ লাখ টন এলএনজি রূপান্তরের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে। এতে প্রতিবছর বৈশ্বিক এলএনজি সরবরাহ সক্ষমতা হবে ২০২৮ সালে ৬৬ কোটি ৬৫ লাখ টন। বর্তমানে বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি এলএনজি সরবরাহের তালিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও অস্ট্রেলিয়া। রাশিয়া, কানাডা ও আফ্রিকার দেশগুলোও সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।

গত বছর জাপানে ৮ শতাংশ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫ শতাংশ কমেছে এলএনজি আমদানি। এ দুটি দেশের জাতীয় জ্বালানি পরিকল্পনায় এলএনজির ব্যবহার কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পারমাণবিক বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে চায় তাইওয়ান, সেখানে এলএনজির চাহিদা বাড়তে পারে। গত বছর বিশ্বের বৃহত্তম এলএনজি আমদানির দেশ ছিল চীন। দেশটিতে নিজস্ব গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সরাসরি আমদানির জন্য পাইপলাইন নির্মাণের কারণে এলএনজি আমদানির চাহিদা কমতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারও বাড়াচ্ছে দেশটি। আর্থিক পরিস্থিতির কারণেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে এলএনজির ব্যবহার কম করতে চাইবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো।